ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে এসে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার দুই নারী ক্রিকেটার। মধ্যপ্রদেশের জনবহুল শহর ইন্দোরে তাদের অশ্লীলভাবে শরীর স্পর্শ করে পালিয়ে যায় এক মোটরসাইকেল আরোহী। আকিল আলিয়াস নৈত্র নামে ওই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। যখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে, তখন এক মন্তব্যে বিতর্ক উসকে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী কৈলাশ বিজয়ভার্গিয়া। 

তিনি অজি ক্রিকেটার এবং সংশ্লিষ্ট সবার জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে ‘শিক্ষা’ ও ‘স্মরণীয়’ বলে উল্লেখ করেছেন। এতটুকুতে সীমাবদ্ধ থাকলে হয়তো বিতর্কটা হতো না, মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী ক্রিকেটারদের সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষী না নেওয়া কিংবা স্থানীয় প্রশাসনকে না জানানোকেও দায় দিয়েছেন। বিজেপির এই সংসদ সদস্যের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনেও সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিজয়ভার্গিয়ার বক্তব্যকে ‘দুর্ভাগ্যজনক ও খুবই জঘন্য’ বলে উল্লেখ করেছে কংগ্রেস।

সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি’র সঙ্গে আলাপকালে কৈলাশ বিজয়ভার্গিয়া বলেন, ‘যখনই কোনো খেলোয়াড় বাইরে যাবে, এমনকি আমরা যখন বাইরে যাই, আমরা অন্তত স্থানীয় অভিভাবককে জানাই। আমার মনে হয় এটি তাদের জন্য ভবিষ্যতে স্মরণীয় হয়ে থাকবে, আমরা ভেন্যু ত্যাগ করার আগে আমাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ব্যক্তি অথবা স্থানীয় প্রশাসনকে জানাব। যেহেতু ক্রিকেটারদের নিয়ে মানুষের মাঝে অনেক উন্মাদনা আছে।’

ইংল্যান্ডের এক ফুটবলারের উদাহরণ টেনে মধ্যপ্রদেশের এই মন্ত্রী বলেন, ‘ক্রিকেট অনেকটা ইংল্যান্ডের ফুটবলের মতো। আমি দেখেছি ফুটবলারের জামা টেনে ছিড়ে ফেলা হয়েছে। আমরা হোটেলে অবস্থান করছি কিংবা ক্যাফেতে, অনেক মানুষ তরুণ বাইরে ভীড় করে। বিখ্যাত খেলোয়াড়দের কাছে কেউ কেউ অটোগ্রাফ–ও চায়। এক মেয়ে এসে তাকে চুমু দিলো এবং টেনে জামা ছেড়ার ঘটনাও ঘটেছে। তিনি খুবই বিখ্যাত একজন ফুটবল খেলোয়াড়। কখনও কখনও খেলোয়াড়রা তাদের জনপ্রিয়তার পরিমাণ বুঝতে পারে না। তারা যেহেতু জনপ্রিয়, তাদের সতর্ক থাকতে হবে।’

‘যে ঘটনা ঘটেছে– এটি সবার জন্য শিক্ষা, আমাদের জন্য এমনকি খেলোয়াড়দের জন্যও। তারা কাউকে জানিয়ে বের হয়নি, কাউকে কিছু বলেনি। কিন্তু তারা এখান থেকে শিখবে এবং ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবে’, আরও যোগ করেন মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী পরিষদ সদস্য কৈলাশ।

অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের নিবার্হী প্রধান পল মার্শ জানিয়েছেন, ‘টুর্নামেন্টে ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে প্রোটোকল ভঙ্গের কোনো নজির নেই। এমনকি সেদিন বাইরে বেরোনোর সময়ও তারা সিকিউরিটি ম্যানেজারের (ড্যানি সিমন্স) সঙ্গে পরামর্শ করে যায়। পরবর্তীতে এক ক্রিকেটার খুদে বার্তা পাঠিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কথা জানায়, যা পীড়াদায়ক, তারা মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছে তবে এখন ঠিক আছে। তাদের অভিযোগ পেয়েই তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সিমন্স। উভয়পক্ষই দারুণ কাজ করছে।’

এর আগে ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় ইন্দোরের খাজরানা রোড অঞ্চলে ক্যাফেতে যাচ্ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা। হোটেল থেকে বেরোনোর পরই একটি বাইক তাদের অনুসরণ করতে থাকে। পাশ্ববর্তী একটা ক্যাফের দিকে যাওয়ার সময় ওই বাইকটি তাদের কাছে এসে অশ্লীলভাবে শরীর স্পর্শ করে পালিয়ে যায়। দ্রুত ওই ক্রিকেটাররা হোটেলে বার্তা পাঠান। দুই ক্রিকেটারের অভিযোগের পর এমআইজি থানায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৭৪ নম্বর ও ৭৮ নম্বর ধারায় এফআইআর দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে গ্রেপ্তারের পর অভিযুক্ত আকিলকে হাত ও পায়ে ব্যান্ডেজ লাগানো অবস্থায় হাজির করে ইন্দোর পুলিশ।

প্রসঙ্গত, চলমান নারী বিশ্বকাপে অন্তত তিনটি ম্যাচ ইন্দোরে থাকায় সেখানে লম্বা সময় অবস্থান করতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়া নারী দলকে। শনিবার রাতেই তারা সেখানকার হোলকার স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয়েছিল। যেখানে প্রোটিয়াদের মাত্র ৯৭ রানে গুটিয়ে দিয়ে ৭ উইকেটের বড় জয়ে লিগপর্ব শেষ করল টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিটরা। তারাই একমাত্র দল যারা এই আসরে কোনো ম্যাচ হারেনি। ৭ ম্যাচে ৬ জয় এবং একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ার পর ১৩ পয়েন্ট নিয়ে তারা সেমিফাইনালে লড়বে ভারতের সঙ্গে। ৩০ অক্টোবর নাভি মুম্বাইয়ে হবে ম্যাচটি।