বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনকে ঘিরে একের পর এক নাটকীয়তা তৈরি হচ্ছে। তারই মধ্যে সবচেয়ে বড় চমক হলো সাবেক অধিনায়ক ও জাতীয় দলের তারকা ওপেনার তামিম ইকবালের সরে দাঁড়ানো।

গত বুধবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে বিসিবি কার্যালয়ে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তামিম ইকবাল। এসময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন,
“এই নির্বাচন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের জন্য কালো দাগ হয়ে রইল। বোর্ড চাইলে এভাবে নির্বাচন করতে পারে, জিততেও পারে। কিন্তু আজ ক্রিকেট শতভাগ হেরে গেল।”

তামিম আরও দাবি করেন, নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ছিল না, হঠাৎ করে নিয়ম পাল্টানো হয়েছে, প্রভাব খাটানো হয়েছে এবং কাউন্সিলরদের ভোটাধিকার নিয়েও অসঙ্গতি ছিল।

images

এই নির্বাচনের সবচেয়ে বড় বিতর্ক ছিল ১৫টি ক্লাবকে ঘিরে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে থাকা ক্লাবগুলোকে প্রাথমিকভাবে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয় নির্বাচন কমিশন। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে তারা ভোটাধিকার ফিরে পায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার হাইকোর্ট আবারও তাদের ভোটাধিকার স্থগিত করে।

ক্রীড়া বিশ্লেষকদের মতে, এই ১৫ ভোট হারানোয় তামিমের সমীকরণ ভেঙে যায়। ওই ভোটগুলো তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলেই শেষ মুহূর্তে তিনি প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ান।

তামিমের নাম উঠে আসে বিভিন্ন রাজনৈতিক টানাপোড়েনের সঙ্গেও। নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি নেতাদের সন্তানরাও প্রার্থী হয়েছেন। আবার সরকার সমর্থিত একটি শক্তিশালী প্যানেলের সঙ্গেও তামিম সমঝোতায় যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

download

সিনিয়র সাংবাদিক এম এম কায়সারের মতে
“বাস্তবতা হলো তামিম এই নির্বাচনে সরকারপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা করতে গিয়ে এবং নিজের প্যানেলে জায়গা বণ্টনে সমস্যায় পড়েছেন। ফলে চাপ সামলাতে না পেরেই তিনি সরে দাঁড়িয়েছেন।”

মনোনয়ন প্রত্যাহারের পর তামিম বলেন,
“আমিসহ ১৪-১৫ জন প্রার্থী সরে দাঁড়িয়েছি। যারা বোর্ডে আছেন, তারা এইভাবে জিততে পারেন, কিন্তু আসল কথা হলো—ক্রিকেট হান্ড্রেড পার্সেন্ট হেরে গেছে।”

তাঁর অভিযোগ, অনেককে চাপ প্রয়োগ করে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাখা হয়েছে। আবার যেসব প্রার্থী প্রত্যাহার করেছেন, তাদের প্রায় সবাই হেভিওয়েট নাম। তাই এই নির্বাচন ন্যায্য হচ্ছে না বলেই তিনি মন্তব্য করেন।

এবারের নির্বাচনে মোট ২৫ পরিচালক পদে লড়বেন ৩৩ জন প্রার্থী। কাউন্সিলরদের ভোটে পরিচালকরা নির্বাচিত হবেন, পরে তারাই সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্ধারণ করবেন। আগামী ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলা ও বিভাগ থেকে কয়েকজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন।

তামিম ইকবালের সরে দাঁড়ানোয় নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক আরও বেড়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে কেবল ব্যক্তি নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেট পরিচালনার স্বচ্ছতা নিয়েই নতুন করে প্রশ্ন উঠল।