পাকিস্তান ক্রিকেটে অধিনায়ক, কোচ বা নির্বাচকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো যেন রকিং চেয়ারের মতো—এক মুহূর্তে এখানে, পর মুহূর্তে অন্য কোথাও। সেই ধারাবাহিক অস্থিরতার মধ্যেই এবার ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব হারালেন অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক ব্যাটার মোহাম্মদ রিজওয়ান। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন বাঁহাতি পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি।
সোমবার (২০ অক্টোবর) রাতে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই পরিবর্তনের ঘোষণা দেয়। তবে রিজওয়ানকে সরিয়ে দেওয়ার পেছনে কোনো কারণ স্পষ্ট করেনি বোর্ড।
এই আকস্মিক সিদ্ধান্তকে ঘিরে উঠেছে নানা প্রশ্ন ও বিতর্ক। সাবেক ক্রিকেটার রশিদ লতিফ দাবি করেছেন, পিসিবির নেতৃত্ব বাছাই প্রক্রিয়া রাজনৈতিক কৌশলের মতো বিভাজনমূলক নীতির ওপর নির্ভর করে চলছে।
রশিদ লতিফ এক্স (সাবেক টুইটার) এ পোস্ট করে লেখেন,শাহিন শাহ আফ্রিদিকে ওয়ানডে অধিনায়ক করা হলো। সাধারণত রাজনীতিতে ক্ষমতা দখল ও টিকিয়ে রাখতে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতি প্রয়োগ করা হয়। পাকিস্তানই একমাত্র দল যারা সঠিকভাবে অধিনায়ক নির্বাচন করতে পারে না।”
তার এই বক্তব্যে যে তীব্র অসন্তোষ রয়েছে তা স্পষ্ট, তবে সবচেয়ে বড় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে ওই পোস্টের সঙ্গে যুক্ত একটি ছবি—যেখানে রিজওয়ানের মুখের পাশে যুক্ত ফিলিস্তিনের পতাকা।
ফিলিস্তিন সংহতি বার্তা কি কাল হল রিজওয়ানের?
রিজওয়ান বিভিন্ন সময়ে গাজা ও ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রকাশ্যে সংহতি জানিয়ে আসছেন। তার এমন বার্তা কিছু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বোর্ড ও সংস্থার নজর কাড়লেও, পাকিস্তানের ভেতরে এটি দলীয় কোচের বিরূপ মনোভাব ডেকে এনেছে—এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন রশিদ লতিফ।
এ বিষয়ে পিসিবি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে পেছনে রাজনৈতিক বা আদর্শিক মতবিরোধ রয়েছে কি না, তা নিয়েই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে মোহাম্মদ রিজওয়ানের নেতৃত্বচ্যুতি।
দলের ভেতরে অস্থিরতা ও নেতৃত্বের রদবদল
পাকিস্তান ক্রিকেটে নেতৃত্বের হালচাল এমনিতেই গত কয়েক বছরে ছিলো বেশ অস্থির। রশিদ লতিফ তার পোস্টে ২০২৩ সালের মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত ৯ দফা অধিনায়ক পরিবর্তনের তালিকা দিয়েছেন। নিচে সময়ক্রম তুলে ধরা হলো:
- ১৩ মার্চ ২০২৩ – শাদাব খান (নাজাম শেঠির সময়)
- ১৫ নভেম্বর ২০২৩ – বাবর আজম পদত্যাগ করেন
- ১৫ নভেম্বর ২০২৩ – শাহিন আফ্রিদি টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক
- একই সময় – শান মাসুদ টেস্ট অধিনায়ক
- ২৯ মার্চ ২০২৪ – শাহিনকে সাদা বলের নেতৃত্ব থেকে সরানো
- ৩১ মার্চ ২০২৪ – টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাবরের প্রত্যাবর্তন
- ১ অক্টোবর ২০২৪ – বাবর আজম আবারও পদ ছাড়েন
- ২৭ অক্টোবর ২০২৪ – রিজওয়ান সাদা বলের অধিনায়ক
- ৪ মার্চ ২০২৫ – সালমান আলি আগা টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক
- ২০ অক্টোবর ২০২৫ – শাহিন শাহ আফ্রিদি ওয়ানডে অধিনায়ক
এই বারবার নেতৃত্ব পরিবর্তনকে “অপেশাদার ব্যবস্থাপনার প্রতিফলন” হিসেবে ব্যাখ্যা করছেন বিশ্লেষকরা।
এত ঘনঘন নেতৃত্ব বদলের মধ্যে দিয়ে একটি দলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে—বিশেষত যখন বিশ্বকাপ ও বড় টুর্নামেন্টের মতো প্রতিযোগিতাগুলো সামনে থাকে। শাহিন আফ্রিদির অধীনে পাকিস্তান দল কেমন পারফর্ম করে, সেটি সময়ই বলে দেবে।
তবে রিজওয়ানকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত এবং তার আগে-পরে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো যে সাধারণ নয়, বরং বিতর্কিত—তা এখন আর বলার অপেক্ষা রাখে না।