গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাহাত খন্দকার তৈরি করেছেন অভিনব এক ভাসমান যান, যা দেখতে বিলাসবহুল স্পোর্টস কার ল্যাম্বরগিনির মতো হলেও চলে নদীর বুকে। স্থানীয়রা একে বলছেন—‘নদীতে ছুটে চলা ল্যাম্বরগিনি’।
নয় মাসের পরিশ্রম আর প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচে তৈরি এই যানটি বিশেষভাবে বানানো আসনে পাঁচজন যাত্রী নিয়ে ঘণ্টায় ৮–৯ কিলোমিটার বেগে নির্বিঘ্নে চলতে পারে। চালকসহ যাত্রীরা উত্তাল ব্রহ্মপুত্রের পানিতে ঘুরে বেড়াতে পারছেন।
অর্থাভাবের কারণে দামি স্পিডবোট ইঞ্জিন কিনতে পারেননি রাহাত। তাই ঢাকার বাজার থেকে সংগ্রহ করা যন্ত্রাংশ আর একটি পুরোনো প্রাইভেট কারের ইঞ্জিন ব্যবহার করেছেন। গাড়ির বডি, ফাইবার কাঠামো, এমনকি বসার আসনও বানিয়েছেন নিজের হাতে। নিরাপত্তার জন্য ভাসমান যানটিতে রয়েছে আলোর ব্যবস্থা ও জরুরি সিগন্যাল সিস্টেম।
রাহাত বলেন,
‘পড়াশোনার ফাঁকেই দীর্ঘ পরিশ্রমে বানিয়েছি ল্যাম্বরগিনির আদলে নৌযানটি। সামনে চারটি চাকা সংযুক্ত করার পরিকল্পনা আছে। তখন শুকনো মৌসুমে রাস্তায়ও চলবে এটি।’

এর আগেও তিনি ধান কাটা মেশিন, ফায়ার ফাইটার রোবট, এয়ার স্পিডবোট ও ব্যাটারিচালিত ইউনিসাইকেল তৈরি করেছেন। তবে আর্থিক অস্বচ্ছলতা তার প্রতিভা বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাহাতের মা রুপালি বেগম বলেন,
‘ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই মেশিন নিয়ে খুঁটিনাটি করতে ভালোবাসে। অনেক কিছু বানিয়েছে, কিন্তু অভাবের কারণে থেমে যাচ্ছে। যদি সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা পায়, তাহলে আরও বড় কিছু করতে পারবে।’
স্থানীয় শিক্ষার্থী শাপলা খাতুন বলেন,
‘ল্যাম্বরগিনি গাড়ি ইউটিউবে দেখেছি। কিন্তু নদীতে এমন গাড়ি চলতে প্রথম দেখলাম। সবচেয়ে আনন্দের বিষয়, আমাদের গ্রামের এক শিক্ষার্থী এটি বানিয়েছে।’
ভাসমান গাড়িটি দেখতে নদীর পাড়ে ভিড় করছেন অসংখ্য মানুষ। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ সেলফি, আবার কেউবা ভিডিও বানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
স্থানীয়রা মনে করছেন, রাহাতের এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে নৌপথের যোগাযোগ কিংবা প্রতিরক্ষা খাতেও কাজে লাগতে পারে। তারা বলছেন, ব্রহ্মপুত্রের ঢেউয়ের ওপর ছুটে চলা এই ভাসমান গাড়ি কেবল বিনোদনের জন্য নয়—এটি এক কিশোরের স্বপ্ন, প্রতিভা আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির প্রতিচ্ছবি।