সিরাজগঞ্জে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে নির্মিত বিসিক শিল্পপার্কে (BSCIC Industrial Park) ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কাজ অসমাপ্ত রেখেই উদ্যোক্তাদের কাছে প্লট হস্তান্তর করায় চরম ক্ষোভে ফুঁসছেন বিনিয়োগকারীরা। অবকাঠামোগত নানা সমস্যা ও ত্রুটির কারণে বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছাতিয়ানতলীতে ৭১৯ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই শিল্পপার্ক। এখানে মোট ৮২৯টি প্লটে প্রায় ৫৭০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫০টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের, আর দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য রয়েছে ২৭৯টি প্লট।

প্লট নয়, যেন পুকুর!

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গত ৩০ জুলাই উদ্যোক্তাদের হাতে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হলেও অধিকাংশ জায়গা এখনো শিল্প স্থাপনের উপযোগী নয়। অধিকাংশ প্লটেই মাটি ভরাট অসম্পূর্ণ, কোথাও কোথাও ৫–৬ ফুট পর্যন্ত গর্ত, অনেক জায়গা প্লাবিত হয়ে পুকুরে রূপ নিয়েছে।

সরকার আর্ট প্রেসের মালিক মো. সিরাজুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “কর্তৃপক্ষ আমাদের প্লটের বদলে পুকুর দিয়েছে। তারা হয়তো ভুল করে প্লট লিখে ফেলেছে। এখানে ফ্যাক্টরি না, মাছ চাষ করা সম্ভব!”

গোল্ডেন প্রিমিয়াম ওয়েল মিলসের সত্ত্বাধিকারী মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, “আমাদের প্লট রাস্তার সমতলে নয়, বরং গভীর গর্তে। প্রায় ৫ থেকে ৬ ফুট নিচে অবস্থান করছে। এতে করে কোনো কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। বি-ব্লকে প্রায় ৫ লাখ ঘনফুট সেফটি বালু কম রয়েছে বলেও জানতে পেরেছি।”

‘দলীয় প্রভাব’ ও অসমাপ্ত কাজ

উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, দলীয় প্রভাব কাজে লাগিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেড কাজ শেষ না করেই শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রকল্পটি হস্তান্তর করেছে। এতে করে প্লট বুঝিয়ে দেওয়া হলেও রাস্তা, ড্রেনেজ, পানি ও গ্যাস সরবরাহসহ মৌলিক অবকাঠামো এখনো অনুপস্থিত।

নিম্নমানের রাস্তা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার অকার্যকারিতা, পানির সংকট এবং অসমাপ্ত মাটি ভরাট—সব মিলিয়ে প্রকল্পটি এখন একাধিক সমস্যায় জর্জরিত।

চেম্বারের দাবি, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান

সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, “এই বিসিক শিল্পপার্ক দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় শিল্প এলাকা হতে পারে। নৌ, রেল ও সড়কপথের সংযোগ থাকায় বিনিয়োগকারীরা এখানে বাড়তি সুবিধা পাবেন। কিন্তু দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে সেই সম্ভাবনা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়কে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।”

প্রশাসনের ভাষ্য ও ভবিষ্যতের শঙ্কা

বিসিক সিরাজগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাহবুবুল ইসলাম বলেন, “আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেখানে মাটি কম রয়েছে, সেখানে মাটি সরবরাহ করা হবে।”

তবে উদ্যোক্তারা বলছেন, যদি দ্রুত অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন না হয়, তাহলে এখানে বিনিয়োগ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মুখে পড়বে। এতে সরকারের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যমাত্রাও ব্যাহত হতে পারে।

এক লাখ কর্মসংস্থানের স্বপ্ন কি অধরাই রয়ে যাবে?

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিসিক শিল্পপার্কটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে প্রায় এক লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বর্তমান বাস্তবতায় সেই স্বপ্ন অনিশ্চয়তার মুখে। উদ্যোক্তারা বলছেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ছাড়া কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানই এখানে কার্যক্রম শুরু করতে পারবে না।