আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি'র পক্ষ থেকে প্রথম দফায় ২৩৭টি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণার পরই দেশের বিভিন্ন জেলায় ভিন্ন ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গুলশানে এই তালিকা প্রকাশ করার পর এক দিকে যেমন নির্বাচিত প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে আনন্দ ও উচ্ছ্বাস ছড়িয়েছে, তেমনি অন্যদিকে মনোনয়নবঞ্চিত অনেক হেভিওয়েট নেতার কর্মী-সমর্থকরা বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ ও অগ্নিসংযোগের মতো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছেন।
মেহেরপুর-২ (গাংনী): গাংনীতে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে বিএনপি'র দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সাবেক এমপি আমজাদ হোসেনের মনোনয়নের প্রতিবাদে জাভেদ মাসুদ মিল্টনের সমর্থকরা প্রথমে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে আমজাদ হোসেনের অফিসে হামলা ও কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় আমজাদ হোসেনপন্থীরা পাল্টা হামলা চালিয়ে মিল্টনের অফিসের আসবাবপত্র ও সাইনবোর্ডে আগুন ধরিয়ে দেন। প্রায় দুই ঘণ্টার সংঘর্ষে ১৯টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর হয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
চাঁদপুর (ফরিদগঞ্জ): ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এম. এ হান্নান মনোনয়ন না পাওয়ায় তার সমর্থকরা উপজেলা সদরের সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন। তারা মনোনয়ন পাওয়া লায়ন মো. হারুনুর রশিদের বিলবোর্ড ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেন।
চট্টগ্রাম (সীতাকুণ্ড): কেন্দ্রীয় সাবেক যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক লায়ন আসলাম চৌধুরী এফসিএ মনোনয়ন না পাওয়ায় তার অনুসারীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাঁচটি স্পটে সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে।
নাটোর (লালপুর): নাটোর-১ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত ড. ইয়াসির আরশাদ রাজনের সমর্থকরা বনপাড়া-পাবনা মহাসড়কের কদমচিনাল এলাকায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করেন। এসময় রাজনের এক সমর্থকের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে।
এছাড়াও, একাধিক আসনে মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন নেতাকর্মীরা:
মাদারীপুর-১ (শিবচর): জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাবলু বাদ পড়ায় তার কর্মী-সমর্থকরা ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাঁচ্চরে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করেন। এতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে লাভলু নিজে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এই আসনের প্রার্থীর মনোনয়ন বিএনপি স্থগিত করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সাতক্ষীরা-৩: অধ্যাপক ডা. মো. শহিদুল আলমের সমর্থকরা সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ প্রধান মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন।
কুমিল্লা-৬ (সদর): সাবেক সংসদ সদস্য হাজি আমিন উর রশিদ ইয়াছিনকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তার সমর্থকরা পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন এবং নগরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর): উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণের সমর্থকরা মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
নওগাঁ-৪: এম এ মতিনের কর্মী-সমর্থকরা তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে ডা. ইকরামুল বারী টিপুকে মনোনয়ন দেওয়ায় সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন করেন।
বিক্ষোভ ও অবরোধের বিপরীতে বগুড়া, দিনাজপুর ও ফেনীতে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রার্থী হওয়ায় নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন।
বগুড়া-৭, রংপুর-৩ ও ফেনী-১: এই তিনটি আসনে খালেদা জিয়া এবং বগুড়া-৬ আসনে তারেক রহমান প্রার্থী হওয়ায় কর্মী-সমর্থকরা আনন্দ মিছিল ও মোটরসাইকেল র্যালি বের করেন।
দিনাজপুর-৩: খালেদা জিয়া প্রার্থী হওয়ায় জেলাজুড়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাসের জোয়ার ওঠে এবং এক বিশাল মোটরসাইকেল আনন্দ র্যালি বের করা হয়।
ইএফ/