জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ করেছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। টানা তিনদিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর নিজের মক্কেলদের নির্দোষ দাবি করে তারা খালাসের আবেদন করেছেন।

বুধবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলের সামনে আমির হোসেন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সোয়া ৩টা পর্যন্ত তার যুক্তিতর্ক চলেছে।

এদিন তিনি মামলার বিভিন্ন সাক্ষীর জবানবন্দি নিয়ে যুক্তি খণ্ডন করেন। বিশেষ করে রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, দৈনিক ‘আমার দেশ’ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের বক্তব্য সামনে এনে তাদের সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করেন। আমির হোসেন বলেন, “রাজসাক্ষী মামুন অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে নিজে বাঁচার চেষ্টা করছেন।” এছাড়া মাহমুদুর রহমান ভিন্ন মতাদর্শের কারণে শেখ হাসিনাকে দেখতে পারেন না, এ কারণে তার সাক্ষ্য মামলায় প্রভাব ফেলবে না বলেও যুক্তি দেন তিনি।

ট্রাইব্যুনালে মামলার পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ, মঈনুল করিম, সুলতান মাহমুদসহ অন্যান্যরা।

গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে আমির হোসেন সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি বিষয়েও বিশদ বর্ণনা দেন। ২০ অক্টোবর থেকে পলাতক আসামিদের পক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু করেন তিনি। এর মধ্যে তিনি শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইন, আওয়ামী লীগের শাসনামল, ১৯৭১ সালের পটভূমি, শাপলা চত্বরে হত্যাযজ্ঞ ও ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের কথা তুলে ধরেন।

এর আগে, ১৬ অক্টোবর পাঁচদিন ধরে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে প্রসিকিউশন শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন। রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুনের শাস্তি বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেন তারা।

মামলায় মোট ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। ৮ অক্টোবর মামলার প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে তৃতীয় দিনের মতো জেরা করেছেন আমির হোসেন।

২০১৯ সালের ১০ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই মামলায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন। মামলায় পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগপত্র মোট ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার, যার মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠা, শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা। ৮১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। গত ১২ মে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন চিফ প্রসিকিউটরের কাছে জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।