জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মোট ১,৯৮৮ কোটি টাকার ১৩টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে আলোচিত ‘জলবায়ু সহনশীল জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প’ (সিআরএলইপি) অনুমোদন পায়নি।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এসব প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা অসুস্থ থাকায় কোনো সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি।
সভায় হাওর ও খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে জলবায়ু সহনশীল জীবনমান গঠনের উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত ‘সিআরএলইপি’ প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলেও, সেটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রকল্পটির কাঠামো নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বলেন, "জলবায়ু সহনশীলতার নামে এই প্রকল্পে মূলত ইট-পাথর ও অবকাঠামো নির্মাণে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অথচ টেকসই জীবিকা উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য হ্রাসের দিকটি উপেক্ষিত।"
এই আপত্তির ভিত্তিতে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, হাওর অঞ্চলের প্রকৃত চাহিদা অনুযায়ী প্রকল্পের অবকাঠামোগত অংশ কমিয়ে এবং জীবিকা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করে পুনর্গঠনের পর প্রকল্পটি পুনরায় একনেকে উপস্থাপন করা যাবে।
এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘জলবায়ু সহনশীলতার আড়ালে ইট-পাথরের প্রকল্প’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, প্রকল্পের নামে জলবায়ু সহনশীলতার কথা বলা হলেও, বাস্তবে এটি একটি অবকাঠামোকেন্দ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা। হাওর অঞ্চলে অতিরিক্ত রাস্তা ও ভবন নির্মাণ প্রকৃতি ও কৃষির জন্য হুমকি—বন্যার মৌসুমে পানি চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়, কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, মাছের প্রজননও ব্যাহত হয়।
একনেক সভা সূত্রে জানা গেছে, জলবায়ু সহনশীল প্রকল্পটি বাতিল নয়, বরং ফেরত পাঠানো হয়েছে। সংশোধনের পর প্রকল্পটি পুনরায় উপস্থাপন করা যাবে। পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, “টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে প্রকৃতি ধ্বংস নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থান করে জীবিকা গড়ে তুলতে হবে।”
পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, সভায় অনুমোদিত ১৩টি প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১,৮৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৫৩ কোটি ২ লাখ টাকা আসবে বৈদেশিক ঋণ থেকে, ৫০ কোটি টাকা প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন এবং বাকি অর্থ সরকারি কোষাগার থেকে প্রদান করা হবে।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- কক্সবাজারে কৃষি খাদ্য ব্যবস্থা রূপান্তরের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি
- গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা টেকসইকরণ প্রকল্প
- খুলনা বিভাগের পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন
- গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের অভ্যন্তরীণ সড়ক ও ফুটপাত উন্নয়ন
- উত্তরা লেক উন্নয়ন প্রকল্প
- ক্যানবেরায় বাংলাদেশ দূতাবাস ভবন নির্মাণ
- কিশোরগঞ্জ থেকে পাকুন্দিয়া-মির্জাপুর টোক সড়ক উন্নয়ন
- বিএসটিআই’র পরীক্ষাগার সম্প্রসারণ
- ঘোড়াশাল তৃতীয় ইউনিট পুনঃশক্তিকরণ
- পাবনার মানসিক হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ইনস্টিটিউটে রূপান্তর
- রেলওয়ের পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেটসমূহের পুনর্বাসন
উল্লেখ্য, অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে নতুন প্রকল্প তিনটি, সংশোধিত প্রকল্প সাতটি এবং ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে এমন প্রকল্প তিনটি।