পিলখানা হত্যাযজ্ঞ, গুম-খুন-আয়নাঘর, শাপলা ট্র্যাজেডি থেকে শুরু করে ভোট কারচুপি— শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলের অন্ধকার অধ্যায়গুলো সংরক্ষিত হবে আসন্ন জুলাই স্মৃতি জাদুঘরে। এ জাদুঘরে সব ঘটনাই উপস্থাপিত হবে নির্ভরযোগ্য দলিল ও তথ্যপ্রমাণসহ।

শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে জাদুঘর নির্মাণ কর্তৃপক্ষ প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে এ তথ্য জানায়।

সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বৈঠকে জানান, আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যেই নির্মাণকাজ শেষ হবে এবং নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে।

তিনি বলেন, “আমরা হাসিনার দুঃশাসনের পুরো চিত্রকে এই জাদুঘরে কিউরেট করছি, যাতে ষোলো বছরের স্বৈরশাসনের দলিল ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে জীবন্ত থাকে। গণভবনের সরাসরি নির্দেশনায় সংঘটিত সব নির্যাতন ও নৃশংসতা এখানে দলিল আকারে সংরক্ষিত হবে।”

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস জাদুঘর নির্মাণে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “এই জাদুঘরে প্রবেশ করলে মানুষ যেন ৫ আগস্ট গণভবনে জনতার ঢলকে অনুভব করতে পারে। দুঃশাসনের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিরোধ গড়ে তোলার অনুপ্রেরণা জোগানোই হবে এর বড় লক্ষ্য।”

জাদুঘরের চিফ কিউরেটর তানজীম ওয়াহাব জানান, নির্মাণকাজে আইসিটি প্রসিকিউশন টিম এবং গুম তদন্ত কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। তাঁর ভাষায়, “এটি হবে এক অনন্য জাদুঘর। শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনকালীন প্রতিটি দুঃশাসনের গল্প এখানে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হবে।”

সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আরও বলেন, “গুম-খুনের নির্দেশনা সংক্রান্ত বহু অডিও ইতোমধ্যেই আমাদের হাতে এসেছে। এসব অডিও এবং গুমের শিকার পরিবারকে দেওয়া মিথ্যা আশ্বাসের ঘটনাগুলোও প্রদর্শিত হবে।”

এছাড়া জাদুঘরে একটি স্ক্রিনিং সেন্টার থাকবে, যেখানে জুলাই বিদ্রোহ এবং ১৬ বছরের দুঃশাসন নিয়ে নির্মিত ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন

গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, গুম কমিশনের সদস্য ড. নাবিলা ইদ্রিস, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মফিদুর রহমান, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের গভর্নিং বডির চেয়ারপারসন মেরিনা তাবাসসুমসহ আরও অনেকে।

গবেষক ও শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন ড্যানিয়েল আফজালুর রহমান, কবি হাসান রোবায়েত, মালিহা নামলাহা, শিল্পী তেজশ হালদার জশ, মোসফিকুর রহমান জোহান, স্থপতি সালাউদ্দিন আহমেদ এবং সমন্বয়কারী হাসান এনাম।