রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকতেই চোখে পড়ে এক অপরূপ দৃশ্য শান্ত জলে ভাসছে লাল, সাদা ও গোলাপি পদ্মফুল। এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্যপট তৈরি করে দিয়েছে পদ্ম পুকুর, যা কলেজের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
পদ্ম পুকুর শুধুই একটি জলাধার নয়, এটি রাজশাহী কলেজের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক। পুকুরজুড়ে পদ্মের শোভা, চারপাশের সবুজ গাছপালা, পাখির কলকাকলি আর বাতাসে ভেসে আসা ফুলের মৃদু ঘ্রাণ তৈরি করে এক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও দর্শনার্থীদের কাছে এটি হয়ে উঠেছে মানসিক প্রশান্তির কেন্দ্রস্থল।
বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া রহমান বলেন, পদ্ম পুকুরের প্রাকৃতিক পরিবেশ আমার খুব ভালো লাগে। ক্লাস শেষে এখানে বসে সময় কাটাতে দারুণ লাগে।
সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আব্দুর রহমান জানান, আমাদের বিভাগ থেকে পুকুরটা স্পষ্ট দেখা যায়। এখানে বসে পড়ালেখা বা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করা সত্যিই আনন্দদায়ক।
বছরের বিশেষ করে বর্ষা ও শরৎকালে পুকুরজুড়ে ফোটে অসংখ্য পদ্মফুল। পুকুরের পানিতে ভেসে থাকা পুরু, গোলাকার সবুজ পাতার ভাঁজে লালচে বা সাদাটে ফুলগুলো যেন একেকটি প্রকৃতির ছায়াছবি। ফুলগুলো সাধারণত রাতে ফোটে, আর দিনের আলোয় তা আরও নান্দনিক হয়ে ওঠে।
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাছিমা খাতুন বলেন, পদ্ম হলো আংশিক জলনিমগ্ন উদ্ভিদ। বর্ষায় ফুল ফোটা শুরু হয়, আর তা শরৎকালজুড়ে স্থায়ী থাকে। পদ্ম শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, এর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ গুণও। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে এবং চুলকানি বা রক্ত আমাশয়ে পদ্ম বেশ কার্যকর।
পদ্মের বৈজ্ঞানিক নাম Nelumbo nucifera, যার গোত্র Nelumbonaceae। এটি বহুবর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। এর মূল বা কন্দ পানির নিচে থাকে, আর পাতা ও ফুল ভাসে ওপরে। পাতার বোটা লম্বা ও ফাঁপা, আর ফুলের রঙ প্রধানত লাল, সাদা ও গোলাপির মিশ্রণ।
পুকুরের সৌন্দর্য শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। কেউ এখানে বসে কবিতা লেখে, কেউ আঁকে ছবি, আবার কেউ শুধু প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটায়।
দর্শনার্থীদের কাছেও এই পুকুর সমান জনপ্রিয়। দর্শনার্থী তানিয়া বলেন, পদ্ম পুকুরের শান্ত পরিবেশ আমাকে খুব ভালো লাগে। এখানে বসলে মন শান্ত হয়ে যায়।
আরেক দর্শনার্থী প্রীতি খাতুন বলেন, সময়ে সময়েই আমি এখানে আসি। পদ্মফুল আর পুকুরপাড়ের পরিবেশ সত্যিই মনকে টেনে আনে।
এই সৌন্দর্য ধরে রাখতে কলেজ প্রশাসনও সচেষ্ট। পরিচ্ছন্নতা কর্মী জিতেন জানান, প্রতি দুই মাস অন্তর আমরা পদ্ম পুকুর পরিষ্কার করি। এতে নতুন নতুন ফুল ও পাতা জন্মায়, যা পুকুরের সৌন্দর্য বাড়ায়।
পদ্ম পুকুর রাজশাহী কলেজের ঐতিহ্যবাহী এক নিদর্শন, যা শুধুই প্রকৃতির শোভা নয় এটি শিক্ষার্থীদের মানসিক সুস্থতা ও সৃজনশীলতাকে এগিয়ে নিতে সহায়ক এক প্রেরণাস্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহ্য ও ভেষজ গুণ সব মিলিয়ে পদ্ম পুকুর হয়ে উঠেছে রাজশাহী কলেজের এক অনন্য রত্ন।
ইএফ/