সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় এল-ফাসের একটি মসজিদে ভয়াবহ ড্রোন হামলায় অন্তত ৭৫ জন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঘটে যাওয়া এই হামলা দেশটিকে নতুন এক মানবিক সংকটে ঠেলে দিয়েছে।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স গ্রুপ’ জানিয়েছে, হামলাটি ঘটেছে বাস্তুচ্ছ্যুতদের আবু সোউক ক্যাম্পের মসজিদে, যা দারফুরের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। সংগঠনের বরাতে জানা গেছে, “মসজিদের ধ্বংসস্তূপ থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।” এ ঘটনায় আহতদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য নিকটবর্তী হাসপাতালগুলোতে পাঠানো হচ্ছে।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সুদানের প্যারামিলিটারি বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ) কোনো মন্তব্য করেনি। তবে তারা দীর্ঘদিন ধরেই দারফুরের নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা চালাচ্ছে। এল-ফেসার শহরটি গত ১৮ মাস ধরে আরএসএফের অবরোধে রয়েছে এবং এটি সুদানের সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা শেষ দারফুর অঞ্চল।

২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে আরএসএফ এবং সুদানের সেনাবাহিনীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হয়, যা দ্রুত ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। এল-ফেসার শহরের পতনের পর পুরো অঞ্চলটি আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে দেখা যাচ্ছে।

মানবিক বিপর্যয়:

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি সতর্ক করেছে যে, চলমান গৃহযুদ্ধে গণহত্যাসহ নৃশংস অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। প্রতিদিনই বহু বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারাচ্ছেন। খাদ্য ও পানি সংকট তীব্র হয়ে ওঠায় লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

স্যাটেলাইট চিত্রে ধ্বংসের চিত্র:

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউমেনিটেরিয়ান রিসার্চ ল্যাব বৃহস্পতিবার প্রকাশিত স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, আরএসএফের সেনারা এল-ফেসার শহরের চারপাশে অবস্থান গ্রহণ করছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আবু সোউক ক্যাম্প এবং ইউনিমিডের শান্তিরক্ষী বাহিনীর ঘাঁটি এখন আরএসএফ-বিরোধী যৌথ বাহিনীর ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি শহরটি সম্পূর্ণভাবে আরএসএফের দখলে চলে, তবে এলাকা থেকে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে এবং দারফুরের এই অংশে মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হবে।

সুদানের চলমান গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানানো হচ্ছে, যাতে বেসামরিক মানুষদের জীবন রক্ষা এবং মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়া যায়।