চলতি বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও আশঙ্কাজনক রূপ নিচ্ছে। সেপ্টেম্বরেই ডেঙ্গুর সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি হলেও, অক্টোবর মাস শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ আগেই হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা তা অতিক্রম করেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, নভেম্বর ও ডিসেম্বরেও ডেঙ্গুর প্রকোপ কমবে না, বরং বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে এ বছরের সংক্রমণ চলবে এবং আগামী বছরও দেশ ডেঙ্গু থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাবে না।

বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ তৌহিদউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এবার ডেঙ্গুর সংক্রমণ প্রাকৃতিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমনই বাড়ছে, কমও প্রাকৃতিকভাবে হবে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৬৮ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই সময়ে মৃত্যু হয়নি। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ৬৩৮ জন, আর মৃতের সংখ্যা ২৯৯।

সেপ্টেম্বর মাসে দেশে চলতি বছরের সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছিল ১৫ হাজার ৮৬৬ জন। কিন্তু অক্টোবরেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৬ হাজার ২৯৬ জন। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৬১ শতাংশই পুরুষ। ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের হাসপাতালে এই সময় ভর্তি হয়েছেন ১৫৮ জন। ঢাকার বাইরে, ঢাকা বিভাগের অন্যান্য এলাকায় ১০৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। বরিশাল বিভাগের সংখ্যা বেশি—৭৩ জন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার যথাযথ দায়িত্ব পালন করেনি। নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, বরং পূর্বের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।”

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, চলতি মাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ হলো শহরাঞ্চলে মশার প্রজনন স্থানে পর্যাপ্ত তদারকি না থাকা। তারা আরও বলছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়ানো, আবাসন ও পুকুর-খালের পরিচ্ছন্নতা, এবং হাসপাতালগুলোর প্রস্তুতি শক্তিশালী করা জরুরি।

ডেঙ্গু মোকাবিলায় কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আরও চাপের মুখে পড়বে এবং সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হবে।

ইএফ/