আলোচিত মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলায় সেনা হেফাজতে থাকা ১৫ জন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে আদালতে তাদের হাজির করা হলে এই আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল।

এদিন সকাল ৮টার পর মামলাগুলোর শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, “তিনটি মামলার মোট ১৫ আসামিকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে হাজির করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।” তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন ভিন্ন বক্তব্য দিয়ে বলেন, “প্রসিকিউশন বলছে গ্রেপ্তার, কিন্তু আমরা বলি আত্মসমর্পণ। কারণ আসামিরা নিজেরা স্বেচ্ছায় আদালতে এসেছেন। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেনি।”

তিনি আরও বলেন, “আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে এই সেনা কর্মকর্তারা আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। আদালত আমাদের পক্ষ থেকে ওকালতনামা গ্রহণ করেছে এবং আমরা জামিনসহ বিভিন্ন আবেদন জমা দিয়েছি। শুনানির জন্য তারিখ ধার্য করা হয়েছে।”

৮ অক্টোবর তিনটি মামলায় মোট ৩৪ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে প্রসিকিউশন। এর মধ্যে ২৫ জনই সেনা কর্মকর্তা। মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • র্যাবের টিএফআই সেলে গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধ
  • জেআইসি বা জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে গুমের অভিযোগ
  • জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় রামপুরায় ২৮ জনকে হত্যার অভিযোগ

তিনটি মামলার একটিতে ১৭ জন, আরেকটিতে ১৩ জন এবং অন্যটিতে ৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জনকে সেনা সদর থেকে হেফাজতে নিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। বাকি আসামিদের মধ্যে কেউ পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

কারাগারে যাওয়া সেনা কর্মকর্তারা:

১. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম
২. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার
৩. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান
৪. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম
৫. ব্রিগেডিয়ার কেএম আজাদ
৬. কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন
৭. কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে)
৮. লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান
৯. লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন
১০. লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম
১১. লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রেদোয়ানুল ইসলাম
১২. মেজর মো. রাফাত বিন আলম
১৩. মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন
১৪. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী
১৫. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী

আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর ১১ অক্টোবর সেনা সদর ১৫ কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেয়। আজ তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় এবং কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তি ২৯ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশ করতে বলা হয়েছে।

মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে:

  • ২০ নভেম্বর: গুম ও নির্যাতন সংক্রান্ত দুটি মামলার পরবর্তী শুনানি
  • ৫ নভেম্বর: রামপুরা হত্যা মামলার পরবর্তী শুনানি

এদিন ভোর থেকেই রাজধানীর কাকরাইল, হাইকোর্ট মাজার গেট, মৎস্য ভবন ও আশপাশের এলাকায় ছিলো কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি এবং সেনাবাহিনীও মোতায়েন করা হয়। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সতর্ক অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।