সেনানিবাসে ঘোষিত সাবজেলে (উপ-কারাগার) ‘জেল কোড’ বা কারাবিধি পুরোপুরি অনুসরণ করা হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গুমের শিকার এবং ভুক্তভোগী আইনজীবী ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাশেম আরমান।
বুধবার (২২ অক্টোবর) বেলা ১১টার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
ব্যারিস্টার আরমান বলেন, “সেনানিবাসের ভেতরে সাবজেল রয়েছে—সেখানে জেল কোড অনুসরণ হচ্ছে কিনা, রাখা ব্যক্তিরা কোনোভাবে সার্ভিং সেনা সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে কি না—এটি নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। যদি তা না হয়, আমরা যারা ভুক্তভোগী ও সাক্ষী—আমরা আমাদের জীবনের জন্য হুমকির আশঙ্কা করছি।”
তিনি আরও বলেন, “আসামিরা যদি গ্রেপ্তার অবস্থায় ক্যান্টনমেন্টে থেকে বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন, সেটি অত্যন্ত ভয়াবহ বিষয় হবে। তাই জনসম্মুখে প্রমাণ করতে হবে, সেখানে কোনো ধরনের বিশেষ সুবিধা বা সংযোগ নেই এবং বিচার কার্যক্রমে কোনো প্রভাব নেই।”
একজন ভুক্তভোগী হিসেবে সেনাবাহিনী সম্পর্কে নিজের আশার কথা জানিয়ে ব্যারিস্টার আরমান বলেন, “দেশপ্রেমিক সেনা সদস্যদের দিয়ে যেন আর কোনোদিন ভাড়াটে খুনের কাজ না করানো হয়। জনগণের রক্ষক সেনাবাহিনী যেন আর কখনো কোনো বাহ্যিক শক্তির পুতুল না হয়—এই বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তা নিশ্চিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”
শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের দেশত্যাগের ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠনেরও দাবি জানান ব্যারিস্টার আরমান। তিনি বলেন, “যখন ওই কর্মকর্তারা দেশত্যাগ করেন, তখন তাদের নামে ওয়ারেন্ট ও পাসপোর্ট বাতিলের আদেশ ছিল। তাহলে কীভাবে তারা ক্যান্টনমেন্ট থেকে দেশত্যাগ করলেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠন করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “যারা সেই সময় দায়িত্বে ছিলেন, তাদের হাতেই কি আমাদের সার্বভৌমত্ব নিরাপদ? অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমার আহ্বান, এসব বিষয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে বিচারিক কার্যক্রম কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়।”
উল্লেখ্য, একই দিনে গুম, খুন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলায় অভিযুক্ত ১৫ সাবেক ও বর্তমান সামরিক কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ।
পলাতক আসামিদের বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশেরও আদেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ২০ নভেম্বর গুম মামলার এবং ৫ নভেম্বর জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় সংঘটিত ২৮ হত্যা মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।