একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে ব্যবহার করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিযোগাযোগ খাতের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস কোম্পানি পিএলসি। শর্ত অনুযায়ী— ওই অর্থ নেওয়ার ৬ মাসের মধ্যে কোম্পানিটি সরকারের বিপরীতে অর্থের সমপরিমাণ শেয়ার ইস্যু করবে। তবে, কোম্পানিটির দ্বিতীয় দফায় নেওয়া ১৫২ কোটি টাকার বেশি অর্থের বিপরীতে বিগত চার বছরেও সরকারের বিপরীতে কোনো শেয়ার ইস্যু করেনি।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারের কাছ থেকে শেয়ার মানি ডিপোজিট হিসেবে ১৫২ কোটি ২৪ লাখ টাকা নিয়ে ব্যবহার করেছে। এই অর্থ কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের টেলিযোগাযোগ প্রকল্পে, আঞ্চলিক সাবমেরিন টেলিযোগাযোগ প্রকল্পে (এসএমডব্লিউ) এবং তৃতীয় সাবমেরিন কেবল প্রকল্পে (এসএমডব্লিউ) ব্যয় করছে। শর্ত অনুযায়ী, এই অর্থ ব্যবহার পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে সরকারের বিপরীতের শেয়ার ইস্যুর কথা থাকলেও কোম্পানিটি তা করেনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলসের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনের নিরীক্ষক আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী (চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস) জানিয়েছেন, কোম্পানিটি ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) বাংলাদেশের আদেশ লঙ্ঘন করেছে। আদেশ অনুযায়ী, অর্থ নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে ওই অর্থের সমপরিমাণ শেয়ার সরকারের বিপরীতে ইস্যু করার বিধান থাকলেও কোম্পানিটি তা করেনি। বরং গত ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানিটি আর্থিক প্রতিবেদনে সরকারের ওই অর্থকে ‘ইক্যুইটি মানি’ হিসেবে দেখিয়ে যাচ্ছে।
এর আগে ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকারের কাছ থেকে ১৬৬ কোটি টাকা নিয়ে প্রকল্পের কাজে ব্যবহার করেছিল বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস। ওই অর্থের বিপরীতে শেয়ার ইস্যু করতেও দীর্ঘ সময় নিয়েছিল কোম্পানিটি। অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চূড়ান্ত অনুমোদন সাপেক্ষে গত বছর সেই শেয়ার ইস্যু করেছিল কোম্পানিটি। তখন অবশ্য সরকার এবং কোম্পানির মধ্যে শেয়ারের দর নির্ধারণী নিয়ে আলোচনার কারণে দেরি হয়েছিল বলে কোম্পানির একটি সূত্র জানিয়েছিল।
২০১২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন এক হাজার কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ১৮৭ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। রিজার্ভে রয়েছে এক হাজার ২৭৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ১৮ কোটি ৭০ লাখ ৩৮ হাজার ৮৪৩টি। এর মধ্যে সরকারের কাছে ৭৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ১ দশমিক ২২ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে বাকি ৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ শেয়ার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭৫ কোটি টাকার লভ্যাংশ ঘোষণা
বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলসের পরিচালনা পর্ষদ গত ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই হিসেবে প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ৪ টাকা ধরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের প্রায় ৭৫ কোটি টাকা নগদ লভ্যাংশ দেবে।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলসের শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ১১ টাকা ১ পয়সা। আগের অর্থবছরে যা হয়েছিল ৯ টাকা ৭৮ পয়সা। গত ৩০ জুন শেষে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নগদ পরিচালন প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) হয়েছে ১৩ টাকা ৭৫ পয়সা। আর শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৯০ টাকা ৯৯ পয়সায়।