পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে ছয় জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে জলদস্যুরা। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সীমান্তবর্তী মামুন্দো নদীর মারডাঙ্গা খাল ও বৈকেরি নদীর হরিণটানা খাল থেকে একে একে তাদের তুলে নেয় দস্যুরা।
অপহৃতদের মধ্যে রাশিদুল ইসলাম (৩৫) ও আতাউর রহমানের (৩২) পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা যথাক্রমে কালিঞ্চি গ্রামের মান্নান বরকন্দাজের ছেলে এবং টেংরাখালী গ্রামের সামছুর রহমানের ছেলে। অপর চারজনের নাম-পরিচয় এখনও জানা যায়নি। তবে নৌকা মালিক কালিঞ্চি গ্রামের মমতাজ ভাঙি মোশারফ হোসেন জানান, সবাই শ্যামনগরের কালিঞ্চি ও টেংরাখালী গ্রামের বাসিন্দা।
সহযোগী জেলেরা দাবি করেছেন, নয় সদস্যের দস্যু দলটি ভারতীয়। তাদের হাতে ছিল চারটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং একটি ভারতীয় নৌযান। সকালে দুই জেলেকে তুলে নেওয়ার পর দুপুরে চারটি নৌকা থেকে আরও চারজনকে জিম্মি করা হয়।
বিজ্ঞাপনটেংরাখালী গ্রামের নুরুল হক জানান, বনবিভাগের পাশ নিয়ে মাছ ধরতে গেলে জলদস্যুরা তাদের ধাওয়া করে। তিনি ও তার দুই সঙ্গী কোনোমতে বনে পালিয়ে যান। আরেক জেলে ওয়েজকুরুনি বলেন, আমরা মারডাঙ্গা খালে মাছ ধরছিলাম। হঠাৎ দুই নৌকা ভরা দস্যু এসে দু’জনকে তুলে নেয়। পাশে থাকা আরও তিন নৌকার জেলেরা বনে পালিয়ে যায়।
অপহরণের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। শতাধিক গ্রামবাসী পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিজিবি তাদের মাঝপথে আটকে দেয়।
রমজাননগর ইউপি সদস্য আব্দুল হামিদ লাল্টু বলেন, আমরা সবাই মিলে যাচ্ছিলাম, কিন্তু বিজিবির অনুমতি না থাকায় থামিয়ে দেওয়া হয়।
নৌকা মালিক মোশারফ হোসেন দাবি করেন, জলদস্যুরা নিজেদের ‘কাজল-মুন্না বাহিনী’ পরিচয় দিয়েছে। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া তাদের কয়েক সহযোগী পুলিশের কাছে মুক্তিপণের টাকা ভারতে পাঠানোর কথা স্বীকার করেছে বলেও জানান তিনি।
শ্যামনগর থানা পুলিশের ওসি মো. হুমায়ুন কবির বলেন, দুই সপ্তাহ আগে একই বাহিনীর তিন সহযোগীকে যশোর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বুধবার ফের অপহরণের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও পরে ফিরে এসেছে।
কৈখালী কোস্টগার্ডের দায়িত্বে থাকা মনিরুজ্জামান নামে একজন বলেন, বিষয়টির খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. ফজলুল হক বলেন, এমন ঘটনা শোনা গেছে, তবে আমাদের কাছে কেউ জানায়নি। জানালে আমরা সঙ্গে সঙ্গে যৌথ বাহিনীর সহযোগিতায় অপারেশন করতে পারতাম। অপহৃতদের মুক্তি দ্রুত নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত উদ্যোগের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।