রাজশাহী কলেজ উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ঊনবিংশ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের রয়েছে বহু নিদর্শন। এর মধ্যে একটি বিশেষ সম্পদ ছিল একটি জাদুঘর বা সংগ্রহশালা, যা এখন অযত্ন,অবহেলায়, অবমূল্যায়নে শতবর্ষ ধরে তালাবদ্ধ পড়ে আছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গৌরবময় অতীতকে সামনে আনার বদলে তা চাপা পড়ে আছে ধুলো ও মাকড়সার জালে।

জাদুঘরটি রয়েছে একটি এককক্ষবিশিষ্ট ঘরে, যা অধিকাংশ শিক্ষক শিক্ষার্থীরই অজানা। একাধিকবার আবেদন জানিয়ে, দশ বারো দিন অপেক্ষার পর সাংবাদিকদের সামনে এক দুপুরে খোলা হয় এই রহস্যময় কক্ষের তালা। স্পষ্টতই এতদিন অপেক্ষা করিয়ে, জাদুঘর খোলার আগেই তারা সেটি পরিষ্কার করেছে। তবুও অবমূল্যায়নের ছাপটি রয়েই গেছে জাদুঘরের প্রতিটি কোণে।

ঘরে ঢুকতেই দেখা যায় দেওয়ালে নামহীন, সালবিহীন ধুলোমাখা ছবি। যেথায় সেথায় পড়ে আছে ফাইলে বন্দি পুরনো নথি পত্র, বই। জাদুঘরটিতে রয়েছে দেশি বিদেশি মনীষীদের প্রতিকৃতি যা অনেক কাল ছিল শিক্ষার্থীদের অজানা। রয়েছে কাঠের আলমারি, ব্রিটিশ আমলের টেবিল ফ্যান, ধুলোমাখা বিভিন্ন প্রকারের মাইক্রোস্কোপ, প্রাচীন ঘড়ি, রেডিও, আয়না, ঝাড়বাতি, এমনকি একটি প্রিন্টিং মেশিন এত মূল্যবান বস্তু, অথচ পড়ে আছে যেন অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু।

WhatsApp Image 2025-10-30 at 5.28.05 PM(1)

জাদুঘরে থাকা উল্লেখযোগ্য নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে,ব্রিটিশ আমলের ৮টি ঘড়ি,৩টি রেডিও ও আয়না,২টি পুরস্কার মেডেল,৩৪টি কাঠের ওপর ছাপা ঐতিহ্যের ছবি,২টি মাইক্রোস্কোপ ও ৬টি বিজ্ঞান যন্ত্র প্রাচীন বই, প্রিন্টিং অলমেট ও শিক্ষকদের ওনারবোর্ড।

কিন্তু এসব ঐতিহাসিক সম্পদের সংরক্ষণের নেই কোনো সঠিক উদ্যোগ। কলেজের লাইব্রেরিয়ান পর্যন্ত জানেন না জাদুঘরের অস্তিত্ব সম্পর্কে।

জাদুঘর সম্পর্কে কলেজের শিক্ষার্থী সামিয়া ফেরদৌসের কাছে জানতে চাইলে তিনি এক রাশি বিস্ময় ও কৌতূহল নিয়ে প্রশ্ন করেন, রাজশাহী কলেজে কি জাদুঘর আছে ? তিনি জানান জাদুঘর সম্পর্কে তিনি একেবারেই অনজ্ঞ ছিলেন।

রাজশাহী কলেজের এই জাদুঘরের বিষয়ে শিক্ষার্থীরাও একেবারেই অনবগত। রাজশাহী কলেজের আরেক শিক্ষার্থী আব্দুস সামাদ বলেন, কলেজের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকলেও আমাদেরকে তা জানানো হয়নি। শিক্ষকদের বক্তব্যেও উঠে এসেছে যে শ্রেণিকক্ষে ইতিহাসচর্চা তেমন হয় না, যদিও লাইব্রেরিতে এ সংক্রান্ত বইপত্র রয়েছে।

WhatsApp Image 2025-10-30 at 5.28.05 PM(2)

সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, রাজশাহী কলেজের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে যথাযথ মর্যাদা দিয়ে এই জাদুঘরকে পুনরুজ্জীবিত করা, শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা এবং আধুনিক সংরক্ষণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা।

রাজশাহী কলেজ শিক্ষার্থী বায়জিদ সরকার বলেন, কলেজের জাদুঘরটি অনতিবিলম্বে সংস্কার করে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হোক। অন্যথায় শতবর্ষী এই নিদর্শনগুলোর অবলুপ্তি আমাদের সাংস্কৃতিক দেউলিয়ার এক অনিবার্য দলিল হয়ে থাকবে।

একটি ঐতিহাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমন গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহশালা বছরের পর বছর তালাবদ্ধ ও অবহেলিত থাকা কেবল দুঃখজনক নয়, তা প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক গাফিলতির স্পষ্ট উদাহরণ। সংরক্ষণের অভাবে ঐতিহ্যের এ মূল্যবান দলিলগুলো আজ ধ্বংসের মুখে।

WhatsApp Image 2025-10-30 at 5.28.04 PM

রাজশাহী কলেজের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী কলেজের জাদুঘর কেন অবহেলায় পরে থাকবে এবং কেনইবা এই জাদুঘরটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে বন্ধ রেখেছে কলেজ প্রশাসন প্রশ্ন করেন সাংস্কৃতিক কর্মী অলিউর রহমান বাবু। তিনি বলেন, কলেজের জাদুঘর কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য, জাদুঘর এই কলেজের একটি ঐতিহ্য এটাকে অবমূল্যায়ন করে প্রশাসন তাদের চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো যুহুর আলি বলেন, জাদুঘরের উন্নয়ন সম্পর্কে আমাদের এখন পর্যন্ত কোনো কার্যক্রম করা হয়নি। বর্তমানে জাদুঘরের গুরুত্ব সম্পর্কে যারা অবহিত তাদের ও সরকারের সহায়তা থাকলে জাদুঘরের উন্নয়ন করা সম্ভব।

ইএফ/