আশুলিয়ায় গত বছরের ভয়াবহ সাত হত্যাকাণ্ড ও মরদেহ পোড়ানোর ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ (৫ নভেম্বর) ১৭তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২–এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে আজকের শুনানি হবে। প্যানেলের অপর দুই সদস্য হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

বিচার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আজকের দিনে দুজন নতুন সাক্ষীর জবানবন্দি শোনা হবে। মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামসহ মোট ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আটজন বর্তমানে কারাগারে এবং বাকিরা পলাতক।

এর আগে ৩০ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেন গুলিবিদ্ধ ভুক্তভোগী সানি মৃধা, যিনি ২১তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। তিনি আদালতকে জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে তিনি আহত হন এবং প্রত্যক্ষ করেন কীভাবে ছয় তরুণকে হত্যা করে তাদের মরদেহে আগুন দেওয়া হয়।

প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ ও আবদুস সোবহান তরফদারসহ আরও কয়েকজন। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও নিয়মিত উপস্থিত থেকে সাক্ষীদের জেরা করছেন।

গত ২৯ অক্টোবর মামলার জব্দতালিকার সাক্ষী হিসেবে আশুলিয়া থানার এসআই আশরাফুল হাসান সাক্ষ্য দেন। তিনি জানান, চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল থানার নির্দেশে ঘটনাস্থল থেকে রাইফেলের ছয় রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে থানায় জমা দেন।

মামলায় গ্রেপ্তার আট আসামির মধ্যে রয়েছেন ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহিল কাফি, সাবেক সার্কেল এএসপি শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেনসহ আরও কয়েকজন।

গত ২১ আগস্ট এ মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। সে সময় রাজসাক্ষী হিসেবে আদালতের অনুমতি পান আসামি এসআই শেখ আবজালুল হক, যিনি নিজের অপরাধ স্বীকার করে মামলার বিস্তারিত জানাতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন ছয় তরুণ, যাদের মরদেহ পরে পুলিশ ভ্যানে তুলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। সেই ঘটনায় জীবিত থাকা একজনকেও পেট্রোল ঢেলে হত্যা করা হয়। নৃশংস এই ঘটনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য করে ১১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়।

তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, এই মামলায় ৬২ জন সাক্ষী ও ১৬৮ পৃষ্ঠার দালিলিক প্রমাণ সংযুক্ত করা হয়েছে। আজকের সাক্ষ্য শেষে আগামী সপ্তাহে পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণের কথা রয়েছে।