পাইলট হওয়ার স্বপ্ন ছিল ৭ বছর বয়সী বাসিত খান মুসার। হাসিখুশি, দুরন্ত এই শিশু ইংলিশ ভার্সনে পড়ত এবং সবসময় ক্লাসে প্রথম হতো। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই মাসে রাজধানীর রামপুরায় ঘটে যাওয়া একটি ঘটনায় পুরো জীবনই পাল্টে যায় তার। পুলিশের ছোড়া গুলি মাথায় বিদ্ধ হওয়ায় সেই স্বপ্ন আজ হুইলচেয়ারে বন্দি।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ এ গুলিবিদ্ধ মুসার বাবার সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। সকালে হুইলচেয়ারে করে মুসাকে আদালত কক্ষে আনা হলে সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠে। আদালতে বসার মাঝেই মাঝেমধ্যে তাকে শুয়ে বিশ্রাম নিতে হয়। তরল খাবার গ্রহণের জন্য এনজি টিউব লাগানো অবস্থায় তাকে দেখা যায়।
মুসার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আমার একটাই ছেলে, তার স্বপ্ন ছিল প্লেন চালাবে। ইংলিশ ভার্সনে পড়ানোর কারণও সেটাই ছিল। আজ কথা বলতে পারে না, স্বাভাবিক খাবারও খেতে পারে না। পুরো জীবনটাই আমাদের ওলট–পালট হয়ে গেছে।”
তিনি জানান, সিঙ্গাপুরে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার পরও দীর্ঘ পথ বাকি। মাথার একপাশে রয়েছে কৃত্রিম স্কাল, ডানপাশ প্রায় অবশ। হাঁটাচলা, কথাবলা—কোনোটাই আর স্বাভাবিক নয়। তবে চিকিৎসকরা আশার কথা জানিয়েছেন—সময় লাগলেও উন্নতির সম্ভাবনা আছে।
বাবার বক্তব্যে উঠে আসে ব্যক্তিগত বেদনার পাশাপাশি ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা। তিনি বলেন, “ছেলের চিকিৎসায় অবহেলা চাই না। আর যারা এই ঘটনার জন্য দায়ী তাদের বিচার চাই।”
ঘটনার বর্ণনায় জানা যায়, গত বছরের ১৯ জুলাই রামপুরায় একটি সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে গুলি তার মাথায় আঘাত করে। একই গুলিতে আহত হয়েছিলেন তার দাদি, যিনি পরে মারা যান। সেই ঘটনার তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়া এখনো চলছে।
আদালতে উপস্থিত প্রসিকিউটররা জানান, আজকের সাক্ষ্যে ঘটনার ভয়াবহতা আবারও স্পষ্ট হয়েছে। গুলির পর শিশুটির আকুল চিৎকার, বাবার দৌড়ে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা—সবই উঠে এসেছে আদালতের সামনে।
পাইলট হওয়ার স্বপ্নে আকাশ ছোঁয়ার কথা ছিল মুসার। এখন সেই আকাশ দূরে সরে গেলেও, পরিবার লড়ে যাচ্ছে একদিন সে হয়তো আবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে।