রাজধানীর রামপুরায় কার্নিশে ঝুলে থাকা তরুণ আমির হোসেনকে গুলি ও দুইজনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আজ (সোমবার) পঞ্চম দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। এদিন দুজন নতুন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার এর নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বেঞ্চে রয়েছেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এ মামলায় অভিযুক্ত রয়েছেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, খিলগাঁও জোনের সাবেক এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মশিউর রহমান, সাবেক এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও রামপুরা ফাঁড়ির সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার।
এ পর্যন্ত ছয়জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। সর্বশেষ ৪ নভেম্বর পুলিশ উপপরিদর্শক গোলাম কিবরিয়া খান ও তদন্ত সংস্থার সহকারী লাইব্রেরিয়ান কনস্টেবল আবু বকর সিদ্দিক সাক্ষ্য দেন। এর আগে শহীদ নাদিম মিজানের স্ত্রী তাবাসসুম আক্তার নিহা ও প্রত্যক্ষদর্শী মো. ইয়াকুব আদালতে ঘটনার বর্ণনা দেন।
প্রথম সাক্ষী হিসেবে গুলিবিদ্ধ তরুণ আমির হোসেন নিজেই আদালতে সাক্ষ্য দেন, যেখানে তিনি বিস্তারিতভাবে ১৯ জুলাইয়ের ভয়াবহ ঘটনাটি তুলে ধরেন।
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই বিকেলে রামপুরার বনশ্রী এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পুলিশ-বিজিবির যৌথ অভিযান চলে। আতঙ্কে আমির হোসেন একটি নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে উঠে কার্নিশে ঝুলে পড়েন। পুলিশ সদস্যরা তাকে লক্ষ্য করে ছয় রাউন্ড গুলি চালান। গুলিতে আহত হয়ে তিন তলায় পড়ে গেলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।
একইদিন পুলিশের গুলিতে নিহত হন নাদিম মিজান ও মায়া ইসলাম, আর গুলিবিদ্ধ হয় মায়ার ছয় বছরের নাতি বাসিত খান মুসা, যে এখনও কথা বলতে পারে না।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে। একমাত্র গ্রেপ্তার আসামি এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার বর্তমানে কারাগারে আছেন। অন্য চারজন আসামি পলাতক।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ, সাইমুম রেজা তালুকদার ও আবদুস সাত্তার পালোয়ান।
আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সাক্ষ্যগ্রহণের এই ধাপ শেষ হলে মামলার যুক্তিতর্ক পর্ব শুরু হবে। বিচার দ্রুত শেষ করতে ট্রাইব্যুনাল প্রতিদিনের শুনানি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।