২০২৪ সালের ১৯ জুলাই, শুক্রবারের এক ভয়াল দুপুর। জুমার নামাজ শেষে বাসায় ফেরার কথা ছিল রামপুরার তরুণ উদ্যোক্তা নাদিম মিজানের। কিন্তু মসজিদ থেকে বেরিয়েই তার বুক লক্ষ্য করে ছোড়া হয় পুলিশ-বিজিবির গুলি। মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম এই মানুষটি। স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে এলে নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে পুরো এলাকা।
তিন বছরের আনাস আর চার বছরের আহনাফ তখনও বুঝে উঠতে পারেনি কী ভয়াবহ বাস্তবতার মুখোমুখি তারা। মা তাবাসসুম আক্তার নিহা স্বামীর রক্তমাখা শরীর দেখে জ্ঞান হারান। পরে চেতনা ফিরতেই শুনতে পান তার স্বামী আর বেঁচে নেই।
সোমবার (৩ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এর বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে হাজির হন নাদিমের স্ত্রী নিহা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রামপুরায় গুলি করে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তিনি তৃতীয় দিনে সাক্ষ্য দেন।
আবেগঘন কণ্ঠে নিহা বলেন, স্বামী জুমার নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন রামপুরা থানার পাশের মসজিদে। নামাজ শেষে বেরোতেই পুলিশের গুলিতে পড়ে যান তিনি। স্থানীয়রা হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মৃত্যুর খবর জানায়।
তিনি আরও জানান, হাসপাতাল থেকে লাশ আনার পর পুলিশ সেটিও নিয়ে যেতে চেয়েছিল। তখন প্রতিবেশী ও আন্দোলনরত ছাত্রদের সহায়তায় আমরা লাশটি বাসায় রাখি। হেলিকপ্টার থেকে তখন টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হচ্ছিল, যার একটি প্রায় আমার মায়ের গায়ে লাগতে যাচ্ছিল।
মায়ের সঙ্গে আদালতে উপস্থিত ছিল ছোট্ট আনাসও। সাক্ষ্য শেষে সাংবাদিকরা কিছু জানতে চাইলে শিশুটি হঠাৎ বলে ওঠে, ‘বাবার হত্যার বিচার চাই, খুনিদের ফাঁসি চাই। নিহা বলেন, বাসায় বা রাস্তায় কাউকে দেখলেই আমার ছেলে এই কথাটাই বলে—বাবার বিচার চাই।
এ মামলায় গ্রেপ্তার আছেন রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার। পলাতক রয়েছেন আরও তিন কর্মকর্তা খিলগাঁও জোনের সাবেক এডিসি রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মশিউর রহমান ও এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া।
মামলার প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন গাজী এমএইচ তামিম, সহযোগিতায় ছিলেন ফারুক আহাম্মদ ও সাইমুম রেজা তালুকদার। ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর)।