পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদি আরবের পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি হওয়ার দুই দিন পর ভারত জানিয়েছে, তারা আশা করে সৌদি আরব দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ ও সংবেদনশীলতার বিষয়টি মাথায় রাখবে।

সৌদি আরব ও পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ পাকিস্তান বুধবার ওই চুক্তি সই করেছে। ভারতের ‘বন্ধু’ দেশ সৌদি আরব। আর সেই সৌদি আরবের সঙ্গেই এই চুক্তি করে ফেলেছে ভারতের শত্রু দেশ পাকিস্তান।

চুক্তির খুব কম তথ্যই প্রকাশ হয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে এই চুক্তি করার অর্থ হতে পারে, এর মাধ্যমে কার্যত একটি পারমাণবিক ঢাল পাবে সৌদি আরব।

মধ্যপ্রাচ্যে কূটনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এবং প্রাণঘাতী একটি ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের (অপারেশন সিঁদুর) কয়েক মাস পর এই চুক্তি হয়েছে। চুক্তিতে বলা হয়েছে, যে কোনও একটি দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হলে তা উভয় দেশের বিরুদ্ধেই আগ্রাসন বলে গণ্য হবে।

ফলে চুক্তিটির খবর প্রকাশ্যে আসতেই ভারতের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মনে ঘুরছে একটি প্রশ্ন। তা হল: আগামী দিনগুলোতে দুই প্রতিবেশী দেশের যুদ্ধে ভারতের সঙ্গে ‘মিত্রতা’ ভুলে পাকিস্তানের জেনারেলদের পাশেই কী দাঁড়াবে আরব বিশ্ব?

পাকিস্তানের সেনাদেরকে অস্ত্র ও গোলা-বারুদ সরবরাহ করবে সৌদি প্রশাসন? এ নিয়ে ইতোমধ্যেই তুঙ্গে উঠেছে জল্পনা।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সৌদি আরবের হাতে আছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘এফ-১৫’ এবং ইউরোপের পাঁচ দেশের যৌথ উদ্যোগে তৈরি ‘ইউরোফাইটার টাইফুন’ জেট। তাছাড়া, সংঘাতময় পরিস্থিতিতে জ্বালানির দিক থেকেও ভারতকে বিপদে ফেলতে পারে সৌদি আরব।

সেই উদ্বেগের বিষয়টি মাথায় রেখেই সৌদি-পাকিস্তান চুক্তির প্রতিক্রিয়ায় ভারতের ওই কূটনৈতিক বার্তা। সৌদি আরবের সঙ্গে ভারতের অংশীদারিত্বের বিষয়টি নতুন করে মনে করিয়ে দিয়েছে নয়াদিল্লি।

শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল স্পষ্ট বার্তা দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে সৌদি আরবকে বলেছেন, “ভারত এবং সৌদি আরবের মধ্যে একটি বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্ব রয়েছে, যা গত কয়েক বছরে যথেষ্ট গভীর হয়েছে।

“আমরা আশা করব, এই কৌশলগত অংশীদারিত্বের বিষয়টি পারস্পরিক স্বার্থ এবং সংবেদনশীলতার দিকটি নজরে রাখবে।” অবশ্য পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিরক্ষাচুক্তির নিশানা যে ভারত নয়, সে ইঙ্গিত বৃহস্পতিবারই দিয়েছিল সৌদি সরকার।

এক শীর্ষ সৌদি কর্মকর্তা বলেছিলেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেক দৃঢ় হয়েছে। আগামী দিনে এই সম্পর্কের বন্ধন যাতে আরও পোক্ত হয়, আঞ্চলিক শান্তি যাতে বজায় থাকে, আমরা সে চেষ্টাই করব।”

ভারতে পেট্রোলিয়ামের অন্যতম শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ সৌদি আরব এবং এবছর দুই দেশ অপরিশোধিত তেল ও তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস সরবরাহে সহযোগিতা বাড়াতে রাজি হয়েছে।

দুই দেশ রিফাইনারি ও পেট্রোকেমিক্যাল খাতে যৌথ প্রকল্পও অনুসন্ধান করছে বলে এবছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জানায়, তারা সৌদি আরব -পাকিস্তান প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে অবগত। এটি দিল্লির জন্য কী প্রভাব ফেলবে তা তারা খতিয়ে দেখছে।

পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রধারী মুসলিম দেশ। এটি এশিয়ার সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর একটি হলেও এর সেনাবাহিনীতে ছয় লাখের বেশি সেনা আছে, যারা সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ ভারতকে মোকাবেলায় প্রস্তুত।

ভারত ও পাকিস্তান তিনটি বড় যুদ্ধসহ আরও বহু সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এর মধ্যে গত মে মাসে দুই দেশের মধ্যে চার দিনের সংঘর্ষ ছিল কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে তীব্র।