ব্রাজিলের রিও দে জেনেইরোর পেনহা ফাভেলা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বড় ধরনের অভিযানের পর শহরজুড়ে মৃত্যুপুরী তৈরি হয়েছে। বুধবার সকালে সড়কের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৬০ জনের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, মঙ্গলবার শুরু হওয়া অভিযানে অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে পরিচালিত এ অভিযানকে স্থানীয়রা পেনহার ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করছে। রাজ্য কর্তৃপক্ষ আগের দিন জানিয়েছিল কমান্ডো ভারমেলিও নামের মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অন্তত ৬৪ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে পুলিশের চার সদস্যও রয়েছেন। তবে বুধবার সকাল পর্যন্ত যে লাশগুলো উদ্ধার হয়েছে, সেগুলো ওই হিসাবের বাইরে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, অভিযান চলাকালে বহু মানুষ নিখোঁজ হন। স্বজনদের খুঁজতে গিয়ে তারা বসতির পেছনের বনাঞ্চল থেকে অনেক মৃতদেহ উদ্ধার করে রাস্তায় এনে রাখেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলোতে দেখা যায়—লাশগুলো সারিবদ্ধ করে রাখা, পাশে উদ্বিগ্ন স্বজনদের অপেক্ষা।
এক নিহত যুবকের মা তাউয়া ব্রিতো কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমি শুধু আমার ছেলেকে শেষবার বিদায় দিতে চাই।
এ অবস্থায় অভিযানের সময় ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। কারণ মাত্র কয়েকদিন পরই রিওতে শুরু হচ্ছে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন ও অন্যান্য বৈশ্বিক আয়োজন। অতীতে ব্রাজিলে অলিম্পিক বা জি২০ সম্মেলনের সময়ও এত রক্তক্ষয় হয়নি বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
নাগরিক সমাজ জানাচ্ছে—দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় সরাসরি উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, ব্রাজিলে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে প্রান্তিক জনগণের প্রাণহানি ক্রমেই উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এদিকে দেশের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা এখনও পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেননি। বিচারমন্ত্রী জানিয়েছেন, ফেডারেল সরকারের কাছে রাজ্য কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের সহায়তার অনুরোধ পাঠায়নি।
অভিযানে ঠিক কী ঘটেছে, কারা নিহত হয়েছেন এবং প্রকৃত মৃতের সংখ্যা কী—তা এখনও স্পষ্ট নয়। স্থানীয় অধিবাসী ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, রাস্তায় শায়িত সেই লাশের স্তূপই বাস্তবতার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছে।