ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা কাদের হাতে থাকবে—তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স। তবে তিনি জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে গাজা উপত্যকার পুনর্গঠন ও অসামরিকীকরণের দিকেই মূল মনোযোগ দিচ্ছে ওয়াশিংটন।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ইসরায়েলে এক উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স। প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ট্রাম্পের জামাতা ও সাবেক হোয়াইট হাউস উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার।

জেরুজালেমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভ্যান্স বলেন, “গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আমরা যে প্রত্যাশা করেছিলাম, বাস্তবে পরিস্থিতি তার চেয়েও ভালো। আমরা আশাবাদী, এই যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে গত দুই বছরের ভয়াবহতা পেছনে ফেলে এক নতুন যাত্রা শুরু করবে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন।”

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভ্যান্স বলেন, “গাজার ভবিষ্যৎ শাসন কার হাতে থাকবে, আমি এই প্রশ্নের উত্তর এখনো জানি না। তবে যা স্পষ্ট, তা হলো—আমরা চাই গাজা যেন আর কখনও ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য হুমকি না হয়। সেই লক্ষ্যে গাজার পূনর্গঠন ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা আমাদের অগ্রাধিকার।”

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা নিয়ন্ত্রিত গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে এক বিস্ময়কর হামলা চালিয়ে ১,২০০ জনকে হত্যা করে এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। এর প্রতিক্রিয়ায় ৮ অক্টোবর থেকে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। টানা দুই বছরের এই সংঘাতে এ পর্যন্ত ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ।

চলমান সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গত ২৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত একটি ২০ দফা পরিকল্পনা পেশ করেন। এই পরিকল্পনায় হামাস ও ইসরায়েল উভয়েই সম্মতি জানায় এবং ১০ অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো—গাজায় একটি অরাজনৈতিক টেকনোক্র্যাট সরকার গঠন। ট্রাম্প এবং যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি এই সরকার গঠনে তদারকি করবে। এই সরকারই আপাতত গাজার প্রশাসনিক ও পুনর্গঠনমূলক সব দায়িত্ব পালন করবে।

টেকনোক্র্যাট সরকারে অংশ নিতে ইতোমধ্যেই আগ্রহ প্রকাশ করেছে হামাস ও পশ্চিম তীরের ক্ষমতাসীন ফাতাহ। যদিও এই দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ও আদর্শিক বিরোধ বিদ্যমান, তবুও বর্তমান পরিস্থিতিতে উভয়েই অন্তর্বর্তী প্রশাসনে থাকার ইচ্ছা জানিয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই টেকনোক্র্যাট সরকার গঠনের মাধ্যমে গাজায় একটি অন্তর্বর্তী শান্তিপূর্ণ প্রশাসনিক কাঠামো তৈরি হতে পারে, যা ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সমাধানের পথ প্রশস্ত করবে।