হোয়াইট হাউজ সম্প্রতি একটি ২০ ধারা বিশিষ্ট চুক্তি পেশ করেছে যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্বাক্ষর করেছেন। এটি ‘শান্তি চুক্তি’ হিসেবে প্রচারিত হলেও, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন ও বিশ্লেষকরা এটিকে একটি রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দেখছেন, যা মানবিক সাজে উপস্থাপিত হলেও বাস্তবে ফিলিস্তিনি স্বার্থকে দুর্বল করার উদ্দেশ্য বহন করছে।
প্রস্তাবনার বাহ্যিক আকৃতি মানবিক মনে হলেও এতে রয়েছে গুরুতর অসাম্য ও শর্তাবলী যেগুলো মূলত ফিলিস্তিনি পক্ষকে পরীক্ষা করে দেখা, তাদের রাজনীতি ও প্রতিরোধের ক্ষমতা ছোট করে দেওয়া এবং গাজাকে বহির্বিশ্ব বিশেষ করে পশ্চিমতীরের সঙ্গে আলাদা করে দেওয়ার পথ সুগম করা।
প্রথমত, যদিও তাত্ক্ষণিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আছে, তা চূড়ান্ত এবং সমতার ভিত্তিতে নয় বরং শর্তসমূহ জুড়ে অবাধ্য হলে চুক্তি বাতিলের সুযোগ রেখে ফিলিস্তিনিদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হবে।
দ্বিতীয়ত, হামাসকে পূর্ণরূপে অস্ত্র সমর্পণের কথা বলা হয়েছে। উল্টো ইসরাইলকে সম্পূর্ণরূপে সশস্ত্র থাকার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এটি দুই পক্ষের মধ্যে সমতা সৃষ্টি না করে, একপক্ষকে দুর্বল করে দেয়।
তৃতীয়ত, বন্দীবিনিময় বিধানেও স্বচ্ছতা কিংবা সমতা না রাখায় সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে ইসরাইল যে বন্দীদের ছাড়বে তা বেছে নেবে; হামাসের রাজবন্দীদের ব্যাপারে কোনো ছাড়ের ইঙ্গিত নেই।
চতুর্থত, ইসরাইলি বাহিনীর প্রত্যাহার শর্তাধীন রাখা হয়েছে ফিলিস্তিনি পক্ষ চুক্তি মানলে বাহিনী সরবে, আর না মানলে বাহিনী থাকবে। এটি ফিলিস্তিনিদের ওপর ভৌত ও রাজনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখার কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পঞ্চমত এবং সবচেয়ে জটিল ধারা হলো গাজার পরিচালনা ও পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিশেষত মার্কিন নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী শাসন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব। ইতিহাসে অভিজ্ঞতা বলে যে এই ধরনের অন্তর্বর্তীকালীন শাসন অনেক সময় স্থায়ী হয়ে যায় এবং স্থানীয় জাতীয় স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। প্রস্তাবে এমন কোনো সময়সীমা বা ডিকম্বিং ম্যাকানিজমও নির্দিষ্ট করা হয়নি।
পুনর্নির্মাণকাজকে বড় প্রাইজ হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও তা শর্তবদ্ধ: শর্ত পূরণ করলে তহবিলও কাজ চলবে, না হলে সব বন্ধ। সর্বশেষ ধারায় ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন চুক্তি মেনে নিলে সহায়তার দরজা খুলে যাবে, না নিলে আমেরিকা ইসরাইলকে সর্বাত্মকভাবে সমর্থন অব্যাহত রাখবে। এই টোনই প্রস্তাবনাটিকে কেবল ‘মানবিক উদ্যোগ’ নয়, বরং রাজনৈতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করার হাতিয়ার বানিয়ে তুলেছে।
ফলত: যেভাবে প্রস্তাবনাটি দাঁড়ানো আছে, সেটি গাজার জনগণের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করার চেয়ে দখলদারিত্বকে অন্য মাত্রায় বৈধতা দেওয়ার পথে একটি কৌশল বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। তাই এটি কোনও মানবিক বা স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান নয় বরং শান্তিচুক্তির মোড়কে উপস্থাপিত একটি কৌশলী রাজনৈতিক পরিকল্পনা।