লিবিয়ার উপকূল থেকে ইউরোপগামী অভিবাসীবাহী একটি নৌকা উল্টে ১৮ জনের মৃত্যু ঘটেছে। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানায়, বাংলাদেশিসহ অন্তত ৯০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
নৌকাটি লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলি থেকে প্রায় ৭৬ কিলোমিটার পশ্চিমে সাবরাথার উপকূলে উল্টে যায়। উদ্ধার অভিযান সোমবার রাতে শুরু হয়ে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত চলে। মৃতদের মরদেহ সুরমান বন্দরের কাছাকাছি উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবীরা মরদেহগুলো সাদা প্লাস্টিক ব্যাগে রাখেন এবং উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করেন।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানায়, লিবিয়ার আল জাওইয়া থেকে যাত্রা করা কাঠের নৌকাটি সমুদ্রে ভাসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে উচ্চ ঢেউয়ের কারণে উল্টে যায়। আইওএম জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ৬৪ জনের মধ্যে ১৮ জন বাংলাদেশি, ৩১ জন সুদানি (একজন নারী ও এক শিশু), ১২ জন পাকিস্তানি ও ৩ জন সোমালিয়ান। তবে মৃতদের মধ্যে কোনো বাংলাদেশি রয়েছে কি না তা এখনও নিশ্চিত নয়।
আইওএমের বরাত দিয়ে রেড ক্রিসেন্ট জানায়, এই দুর্ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, নিরাপত্তা ও সুযোগের খোঁজে বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় মানুষ কতটা ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
এ মাসের শুরুতে লিবিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, টিউনিশিয়ার সীমান্তের কাছে লিবিয়ার জুওয়ারা ও রাস ইজদির এলাকার উপকূল থেকে দুই সপ্তাহে অন্তত ৬১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরীয় পথ বিশ্বের অন্যতম প্রাণঘাতী অভিবাসন রুট। আইওএমের ‘মিসিং মাইগ্র্যান্টস প্রজেক্ট’-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এই রুটে ১,০৪৬ অভিবাসনপ্রত্যাশী মারা গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে। এর মধ্যে ৫২৭ জন নিহত বা নিখোঁজ লিবিয়ার উপকূলে।
আইওএম স্থানীয় অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, সামাজিক সহায়তা ও প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করছে। সংস্থা নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন পথ প্রসারের জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতাও জোরদারের আহ্বান জানাচ্ছে।
২০১১ সালের ন্যাটো-সমর্থিত গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে লিবিয়া ইউরোপগামী অভিবাসীদের প্রধান ট্রানজিট পথ হিসেবে পরিচিত। তবে দেশটি এখনও দুটি সরকারে বিভক্ত থাকায় মানবপাচারকারীরা এই সুযোগ নিয়ে আফ্রিকা, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত অভিবাসীদের নৌকায় চাপিয়ে বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় পাঠাচ্ছে।
ইএফ/