মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের 'অবিলম্বে' পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা শুরুর ঘোষণার পরই কড়া প্রতিক্রিয়া জানালো রাশিয়া। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্রেমলিনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য প্রস্তাব তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশনার মধ্য দিয়ে দুই পরাশক্তির মধ্যে সামরিক উত্তেজনা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেল।

আল জাজিরা জানিয়েছে, গতকাল বুধবার রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে পুতিন সাফ জানিয়ে দেন যে, যদি যুক্তরাষ্ট্র বা বিস্তৃত পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে (সিটিবিটি) স্বাক্ষরকারী কোনো দেশ পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়, তবে ‘রাশিয়া সমান প্রতিক্রিয়া জানাতে বাধ্য থাকবে’।

নির্দেশনা ও যুক্তি: পুতিন বলেন, "এই কারণে আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, গোয়েন্দা সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট বেসামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিচ্ছি— বিষয়টি নিয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে, নিরাপত্তা পরিষদে বিশ্লেষণ উপস্থাপন করতে এবং পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি-সংক্রান্ত প্রাথমিক পদক্ষেপের প্রস্তাব দিতে।"

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক সামরিক পদক্ষেপকে রাশিয়ার প্রতি 'সামরিক হুমকির মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে' বলে মন্তব্য করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রে বেলোউসোভ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, রাশিয়ার পারমাণবিক বাহিনীকে এমন প্রস্তুত অবস্থায় রাখতে হবে যাতে শত্রুর 'অগ্রহণযোগ্য ক্ষতি' ঘটানো যায়। সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমভ সতর্ক করে বলেন, যথাযথ পদক্ষেপ নিতে দেরি হলে যুক্তরাষ্ট্রের কার্যক্রমের জবাব দেওয়ার সুযোগ হারাবে মস্কো। তিনি আরও জানান, রাশিয়ার আর্কটিক অঞ্চলের নোভাইয়া জেমলাইয়া ঘাঁটি অল্প সময়ের নোটিশেই পারমাণবিক পরীক্ষা চালাতে প্রস্তুত।

প্রেক্ষাপট ও অস্ত্রের ভান্ডার: সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর ১৯৯১ সাল থেকে রাশিয়া কোনো পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়নি। তবে ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বর্তমান অস্থিরতা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে। ট্রাম্প তার পারমাণবিক পরীক্ষার নির্দেশের কয়েক দিন আগে রাশিয়ার নতুন ‘বুরেভেস্তনিক’ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন। এই পারমাণবিক শক্তিচালিত ক্ষেপণাস্ত্রটি পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম।

বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্রের দিক থেকে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রই বিশ্বের সবচেয়ে বড় শক্তি। সেন্টার ফর আর্মস কন্ট্রোল অ্যান্ড নন-প্রলিফারেশনের তথ্যানুসারে, রাশিয়ার কাছে প্রায় ৫,৪৫৯টি এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছে প্রায় ৫,৫৫০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে।

বিশ্বের উদ্বেগ: নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন যে, যেকোনো দেশের পারমাণবিক বিস্ফোরণ পরীক্ষা শুরু করলে তা একটি 'কর্ম-প্রতিকর্ম চক্র' সৃষ্টি করবে এবং নতুন পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার জন্ম দিতে পারে। এতে বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা ভেঙে পড়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।

ইএফ/