ইরানের চাবাহার বন্দরে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেপ্টেম্বরের শেষ দিক থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। বন্দরটিতে ভারতের বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে এবং একটি টার্মিনাল সরাসরি ভারতের নিয়ন্ত্রণে। আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে এই বন্দরকে দিল্লি দীর্ঘদিন ধরেই কৌশলগত সম্পদ হিসেবে দেখে আসছে।

কানেক্টিভিটি ডিপ্লোম্যাসির কেন্দ্রে চাবাহার

ইরানের সিস্তান-বালুচিস্তান অঞ্চলের এই বন্দর গড়ে তুলছে ভারত ও ইরান যৌথভাবে। ২০০৩ সালে প্রাথমিক সমঝোতা হলেও প্রকল্পটি গতিশীল হয় ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ইরান সফরের পর। ভারতের জন্য বন্দরের অন্যতম গুরুত্ব হলো—পাকিস্তানকে এড়িয়ে সড়ক ও রেলপথে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার বাজারে পৌঁছানো।

২০২৪ সালের মে মাসে ভারত ইরানের সঙ্গে দশ বছরের জন্য শাহিদ বেহেশতি টার্মিনাল পরিচালনার চুক্তি করে। এটিই ভারতের বিদেশে প্রথম বন্দর পরিচালনার অভিজ্ঞতা। দিল্লি চেয়েছিল এই বন্দরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডর (আইএনএসটিসি)–কে আরও কার্যকর করা, যার আওতায় ভারত, ইরান, রাশিয়া ও ইউরোপ পর্যন্ত বাণিজ্য সহজ হওয়ার কথা।

মার্কিন ছাড় প্রত্যাহার

২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র চাবাহারকে তাদের ইরানবিরোধী নিষেধাজ্ঞা থেকে ছাড় দিয়েছিল, মূলত আফগানিস্তানে তেল ও পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য। তবে ওয়াশিংটনের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী সেই ছাড় প্রত্যাহার করা হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের সহকারী মুখপাত্র থমাস পিগাট জানিয়েছেন, ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে যে কোনো সংস্থা চাবাহার প্রকল্পে যুক্ত থাকলে তারা আইএফসিএ (Iran Freedom and Counter Proliferation Act) অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে।

বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্ত ভারতের ওপর সরাসরি চাপ তৈরি করবে। কৌশলগত বিশ্লেষক ব্রহ্মা চেলানি মন্তব্য করেছেন, “ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। উচ্চ শুল্ক আরোপের পর এবার ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর প্রকল্পকেও শাস্তির আওতায় আনা হলো।” তিনি মনে করেন, পাকিস্তানের গওয়াদর বন্দরের পাল্টা হিসেবে চাবাহার ভারতের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ।

দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগলমানও বলেছেন, “এটা ভারতের জন্য কৌশলগত ধাক্কা। পাকিস্তানের ভেতর দিয়ে না গিয়েই মধ্য এশিয়ায় প্রবেশের একমাত্র কার্যকর রুট হলো চাবাহার।”

ভূরাজনীতির পালাবদল

ভারতের বিনিয়োগ ও পরিকল্পনা এভাবে ঝুঁকির মুখে পড়ায় দিল্লির ‘কানেক্টিভিটি ডিপ্লোম্যাসি’ চাপে পড়তে পারে। ইরান থেকে তেল আমদানি বন্ধের ফলে ভারত আগেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, আর সেই শূন্যস্থান পূরণ করেছে চীন। এবার বন্দরের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে ভারতের কৌশলগত অবস্থান আরও দুর্বল হতে পারে।