উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ দেশ সুদান দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের শিকার। ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনী এবং কুখ্যাত আধা-সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে ২০২৩ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া এই রক্তক্ষয়ী সংঘাত ইতোমধ্যে দেড় লাখেরও বেশি মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। চলমান এই সহিংসতায় সুদানজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে তীব্র দুর্ভিক্ষ, যার ফলে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। জাতিসংঘ এই পরিস্থিতিকে বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।

সুদানের বর্তমান গৃহযুদ্ধের মূলে রয়েছে ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের পতনের পর ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে দুই সামরিক নেতার ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব:

১. জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান: সুদানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও প্রেসিডেন্ট। ২. জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো (হেমেডটি): আরএসএফের কমান্ডার ও দেশটির উপ-নেতা ছিলেন।

২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে তারা একসঙ্গে কাজ করলেও, পরবর্তীতে দেশের ভবিষ্যৎ বেসামরিক শাসন এবং আরএসএফের প্রায় এক লাখ সৈন্যকে সেনাবাহিনীতে একীভূত করার প্রশ্ন নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। মূলত ক্ষমতা, সম্পদ (বিশেষ করে সোনার খনি) এবং প্রভাব ধরে রাখার আকাঙ্ক্ষাই এই দুই নেতাকে সশস্ত্র সংঘাতে নামিয়ে আনে।

২০১৩ সালে গঠিত আরএসএফের মূলে রয়েছে দারফুরের নৃশংস দমনকারী জানজাওয়িদ মিলিশিয়া গোষ্ঠী। জেনারেল দাগালোর নেতৃত্বে এই বাহিনী শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং ইয়েমেন-লিবিয়ার সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণহত্যা, শিশুদের ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন সহ গুরুতর যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি, আরএসএফ পশ্চিম দারফুরের এল-ফাশের শহর নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর সেখানে গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে। জাতিসংঘের তদন্তকারীরাও আরএসএফের গণহত্যা ও সেনাবাহিনীর যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছেন।

আরএসএফ বর্তমানে দারফুরের প্রায় শতভাগ এবং পার্শ্ববর্তী কোর্দোফান অঞ্চলের সিংহভাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। অন্যদিকে, সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছে উত্তর ও পূর্বের অধিকাংশ অঞ্চল। আরএসএফ দেশের বড় একটি অংশের দখল নিয়ে আলাদা সরকার গঠনের দাবি তোলায়, সুদান আবারও বিভক্ত হওয়ার (যেমনটি ২০১১ সালে দক্ষিণ সুদান তৈরি হয়েছিল) তীব্র আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সুদানের ভবিষ্যৎ এখন গুরুতর অনিশ্চয়তার মুখে।

ইএফ/