জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আয়োজিত সেমিনারে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, দেশের ক্যান্সার চিকিৎসার প্রধান সমস্যা টাকার অভাব নয়, বরং সিস্টেমের গলদ, দুর্নীতি এবং অপচয়। তিনি সরাসরি প্রশ্ন তোলেন, একই মানের দুটি চিকিৎসা যন্ত্রের মধ্যে ১৪ কোটি টাকার পার্থক্য কেন? এই বাড়তি টাকায় হাসপাতালে কী ঢুকলো?

উপদেষ্টা নূরজাহান বলেন, সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় অদক্ষতা এবং জটিল নিয়মের কারণে প্রকৃত প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি ব্যয় হচ্ছে, কিন্তু সেবার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে না। তিনি উদাহরণ হিসেবে বলেন, এক ফুলের তোড়ায় ১৫০০–১৬০০ টাকা খরচ করা হচ্ছে, অথচ এই টাকায় অন্তত একজন রোগীর ওষুধ ক্রয় করা যেত।

নূরজাহান বেগম প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবার গুরুত্বও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কার্যকর লড়াই শুরু করতে হলে মানুষকে সচেতন করতে হবে, কারণ ক্যান্সার একদিনে হয় না; দীর্ঘদিনের অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা, তামাকের সংস্পর্শ ও খাদ্যাভ্যাস এর জন্য দায়ী। তিনি উল্লেখ করেন, স্কুলের মেয়েদের যদি এই শিক্ষা দেওয়া হয়, তারা পরিবারে এ বার্তা ছড়িয়ে দেবে, যা রোগ আগেভাগে শনাক্ত করতে সাহায্য করবে।

হাসপাতালের পরিবেশ ও রোগীর কষ্ট নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। একজন রোগী চিকিৎসার জন্য ২৬ হাজার টাকা খরচ করে, যার বেশির ভাগই ধার করা। অনেক রোগী ভর্তি হতে না পেরে বারান্দায় বা রাস্তায় রাত কাটায়। হাসপাতালের ইনডোরে ডাক্তার ছাড়া অন্য কেউ ঢুকতে পারবে না—এ ধরনের ব্যবস্থা জরুরি।

নূরজাহান বেগম প্রাইভেট সেক্টরের উদাহরণও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রাইভেট সেক্টর সরাসরি আন্তর্জাতিক টেন্ডারে যন্ত্রপাতি কিনতে পারে, অথচ সরকার কেন তা করতে পারছে না। নতুন নীতিমালা (পিপিআর) জুড়লেও জটিলতা কমছে না।

উপদেষ্টা পরিষ্কার বলেন, ক্যান্সার চিকিৎসায় আসল বাধা অর্থ নয়, বরং দুর্নীতি ও জটিল সিস্টেম। ১৪ কোটি টাকার ব্যয় কেবল একটি যন্ত্রের নয়, পুরো ব্যবস্থার প্রতীক। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, অপচয় বন্ধ করে সেই অর্থ রোগীর জন্য ব্যবহার করাই আসল উন্নয়ন

সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় ক্যান্সার হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম