অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস (ওএনএস)-এর সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের এপ্রিল নাগাদ পূর্ণকালীন কর্মীদের জাতীয় লিঙ্গভিত্তিক বেতন ব্যবধান কমে ৬ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে, যা যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে সর্বনিম্ন।

একই সঙ্গে স্বল্প বেতনের চাকরিতে কর্মরতদের অনুপাতও কমে ২ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই ইতিবাচক অগ্রগতি ঢাকা পড়েছে দক্ষিণ এশীয় ও মুসলিম সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক বাস্তবতায়। বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিরা সর্বনিম্ন উপার্জন ও সর্বোচ্চ দারিদ্র্যের শিকার।

ওএনএস ও বিভিন্ন শ্রমবাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি শ্রমিকদের অধিকাংশই স্বল্প দক্ষতা ও সেবাভিত্তিক পেশায় নিয়োজিত। এসব কাজে বেতন সাধারণত বাস্তব জীবনযাত্রার মজুরির নিচে। পেশাগত এই বিভাজন ঊর্ধ্বমুখী অগ্রগতির বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি একই ধরনের কাজের ক্ষেত্রেও বেতনে বৈষম্য রয়ে গেছে, যা কাঠামোগত ও পদ্ধতিগত বৈষম্যের প্রমাণ দেয়।

সবচেয়ে উদ্বেগজনক চিত্র দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানি নারীদের ক্ষেত্রে। লিঙ্গ, জাতিগত ও ধর্মীয়—এই তিন স্তরের বৈষম্যের শিকার হয়ে তারা কর্মক্ষেত্রে চরম পিছিয়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, লন্ডনে পাকিস্তানি নারীরা তাদের পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় গড়ে ৬০ শতাংশ এবং বাংলাদেশি নারীরা প্রায় ৫০ শতাংশ কম আয় করেন। যা যুক্তরাজ্যের জাতীয় লিঙ্গভিত্তিক বেতন ব্যবধানের চেয়ে বহুগুণ বেশি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ব্যক্তিগত ‘সাংস্কৃতিক পছন্দের’ ফল নয়, বরং নিয়োগে বর্ণবাদ, নাম বা পোশাকের কারণে বৈষম্য এবং পদোন্নতিতে বঞ্চনার মতো পদ্ধতিগত বাধা থেকেই এ বৈষম্য দেখা দিয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সাশ্রয়ী শিশু যত্নের অভাব ও অনমনীয় কর্মসংস্কৃতি, যা নারীদের কর্মজীবন ও পারিবারিক দায়িত্ব সামঞ্জস্য করা কঠিন করে তুলছে।

বেতন বৈষম্যের আরেকটি বড় কারণ অভিবাসন স্থিতি। গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষ বাংলাদেশি অভিবাসীরা ঐতিহাসিকভাবে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ পুরুষদের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ কম আয় করেছেন। ইংরেজি ভাষাজ্ঞানের ঘাটতি, বিদেশি শিক্ষাগত যোগ্যতার স্বীকৃতি না পাওয়া এবং ভিসা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত করে রেখেছে।

দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিরা তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থায় থাকলেও বৈষম্য পুরোপুরি ঘুচে যায়নি। ফলে এই দুই সম্প্রদায়ের অধিকাংশ পরিবার এখনও নিম্ন আয়ের কুইন্টাইলে রয়ে গেছে, যা অর্থনৈতিক কষ্টের চক্রকে স্থায়ী করছে।

ট্রেডস ইউনিয়ন কংগ্রেস (টিইউসি)-এর সাধারণ সম্পাদক পল নওয়াক যুক্তরাজ্যে লিঙ্গভিত্তিক বেতন ব্যবধানের অগ্রগতিকে স্বাগত জানালেও সতর্ক করে বলেছেন, বর্তমান হারে নারীদের প্রকৃত বেতন সমতা অর্জনে আরও অন্তত ৩১ বছর লাগবে।

তিনি বলেন, জাতিগত ও সামাজিক বৈষম্য দূর না হলে বেতন সমতার এই অগ্রগতি কেবল আংশিক সাফল্য হিসেবেই থেকে যাবে।