শরতের নীল আকাশ আর কাশফুলের দোলায় চারদিকে বিরাজ করছে শারদীয় দুর্গাপূজার উৎসবমুখর আমেজ। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই ধর্মীয় উৎসব। দুর্গাপূজার আগে থেকেই বিপণিবিতানগুলোতে কেনাকাটার ধুম দেখা যাচ্ছে, এবং এবারের উৎসবের মরশুম তার ব্যতিক্রম নয়।

শারদীয় কেনাকাটায় নারীদের প্রথম পছন্দে শাড়ি উঠে এসেছে। ট্র্যাডিশনাল ও স্টাইলিশ সাজে নিজেকে সাজাতে নারীরা শাড়ির দিকে বেশি ঝুঁকছেন। তবে অনেক ক্রেতা অভিযোগ করেছেন, এবারে শাড়ির দাম সাধারণের তুলনায় বেশি।

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর নিউমার্কেটের বিপণিবিতানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন রঙ, ডিজাইন ও কাপড়ের বৈচিত্র্যে ভরপুর শাড়ির দোকানগুলোতে ভিড় বেশ। বিশেষ করে জামদানি, কাতান, সিল্ক, তসর ও হ্যান্ডলুম শাড়ির চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ক্রেতারা জানিয়েছেন, পূজার সময় অন্যান্য কেনাকাটার পাশাপাশি শাড়ি কিনাই তাদের প্রথম পছন্দ। মিরপুর থেকে আসা অর্পিতা দাস বলেন, “পূজার সময় ট্র্যাডিশনাল সাজ ছাড়া পূজার আনন্দ ঠিক আসে না।” উত্তরা থেকে আসা রিক্তা সেন বলেন, “সেলোয়ার-কামিজ বা পশ্চিমা পোশাক সাধারণত পরি, কিন্তু পূজা মানেই শাড়ির উৎসব। তাই এবার তিনটি শাড়ি কিনেছি।”

তবে দাম বাড়ার বিষয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। ধানমন্ডি থেকে আসা তিথী মল্লিক বলেন, “বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়ি দেখেছি, একটা কিনেছি, আরেকটা কিনবো, কিন্তু দাম বেশি চাইছেন। এত বেশি দাম যে বলা যায় না।”খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জামদানি শাড়ি ২ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা, কাতান সিল্ক ৩ হাজার থেকে ১২ হাজার, বালুচরি ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার, তসর সিল্ক ৩ হাজার থেকে ৮ হাজার, ঢাকাই জামদানি ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার, বেনারসি শাড়ি ৪ হাজার থেকে ১০ হাজার, লিলেন শাড়ি ১ হাজার থেকে ৩ হাজার, ব্লক প্রিন্টেড কটন শাড়ি ১ হাজার থেকে ৪ হাজার, বাটিক শাড়ি ১ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে৷

বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এবারের পূজায় বিক্রি হওয়া পোশাকের প্রায় ৬০ শতাংশই শাড়ি। নারীরা জামদানি, আধুনিক ব্লক প্রিন্টসহ বিভিন্ন ডিজাইনের শাড়িতে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব ফ্যাশন সচেতনতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

কিন্তু দাম বাড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অনেক বিক্রেতা। নিউমার্কেটের ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের বিক্রেতা আলমগীর মিয়া বলেন, “বিক্রি ভালো হচ্ছে। আজ ছুটির দিনে অনেক ক্রেতা এসেছে। মোটামুটি লাভ হলেই বিক্রি করছি, বাড়তি দাম রাখার প্রশ্ন আসে না।” সাখাওয়াত আহমেদ নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, “চাহিদা ভালো, চলতি সপ্তাহজুড়ে ক্রেতার চাপ থাকবে।” শারদীয় উৎসবের আগেই এই শাড়ি শোরুম ও বাজারের ধুম স্পষ্ট করে দিচ্ছে, পূজার মরশুমে নারীদের ফ্যাশন ও কেনাকাটার প্রতি আগ্রহ কতটা প্রবল।