বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে কর্মরত শ্রমিকদের প্রায় ৭৮ শতাংশ পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য জোগাতে পারেন না। এ ছাড়া প্রায় ৩২ শতাংশ শ্রমিক ন্যূনতম মজুরিও কম আয় করেন। প্রতি আটজন শ্রমিকের একজন ঋণের জালে জর্জরিত। সাব-কন্ট্রাক্টেড ও মিশ্র ধরনের কারখানায় ১২ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় কাজ করা এখনও সাধারণ ঘটনা।
বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশন (বিএলএফ) ও যুক্তরাজ্যের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাইটস ল্যাবের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে জবরদস্তিমূলক শ্রম ও শিশুশ্রম: ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ ও সমাধানে দিকনির্দেশনা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গুডউইভ-এর সহায়তা ও যুক্তরাজ্য সরকারের অর্থায়নে গবেষণাটি সম্পন্ন হয়।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর বনানীর এক হোটেলে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
গবেষণায় বলা হয়, পোশাক সাপ্লাই চেইনের নিম্নস্তরে এখনও জবরদস্তিমূলক শ্রম ও শিশুশ্রম বিদ্যমান। শিশুশ্রমিকদের প্রায় ৮০ শতাংশ সাব-কন্ট্রাক্টেড বা মিশ্র চুক্তিভিত্তিক কারখানায় কাজ করে। তাদের ৯৯ শতাংশ সপ্তাহে ৩৬ ঘণ্টার বেশি শ্রম দেয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বয়স সংক্রান্ত নথি জাল করে চাকরি নেয়।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে শিশুশ্রমের হার ঢাকার তুলনায় বেশি পাওয়া গেছে। উদ্বেগজনক বিষয় হলো— জরিপে অংশ নেওয়া ৯৮ শতাংশ শিশুশ্রমিক বর্তমানে স্কুলে যায় না, এর মূল কারণ আর্থিক সংকট।
গবেষণায় বলা হয়েছে, দারিদ্র্য ও নিম্ন আয়ের চাপই শিশুশ্রম ও জোরপূর্বক শ্রমের মূল উৎস। তাই সব খাতে জীবিকা নির্বাহযোগ্য ন্যায্য মজুরি বাস্তবায়নের পাশাপাশি শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিএলএফ-এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এএইচএম মোরশেদ স্বাগত বক্তব্য রাখেন। গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন প্রোগ্রাম অফিসার মো. জুবায়ের আলম। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গুডউইভের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর শাহিনুর রহমান ও বিএলএফ-এর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার ইয়াসিন আরাফাত।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ যখন স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘ফোর্সড লেবার অ্যাক্ট’ এর প্রেক্ষাপটে পোশাক খাতের সরবরাহ চেইন থেকে জবরদস্তিমূলক শ্রম ও শিশুশ্রম নির্মূল করা অত্যন্ত জরুরি।
তারা সরকার, উদ্যোক্তা ও আন্তর্জাতিক সহযোগীদের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পকে আরও নৈতিক, মানবিক ও টেকসইভাবে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান।