রংপুরের পীরগাছায় রাশেদুল ইসলাম রাশেদ নামে এক বিএনপি নেতার ওপর হামলার ঘটনায় স্থানীয় রাজনীতিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এ হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রংপুর-গাইবান্ধা আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে রাশেদের অনুসারীরা। একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পীরগাছা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মোস্তাফিজার রহমান রেজার ওপরও হামলার ঘটনা ঘটে। বর্তমানে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
সূত্র জানায়, বিএনপি নেতা রাশেদের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ মামলা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তার অনুসারীরা শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে পীরগাছা উপজেলার দেউতি বাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। তারা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা ও সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল মণ্ডলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন।
অবরোধ চলাকালে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পীরগাছা সদরের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান রেজা রংপুর শহর থেকে পীরগাছায় ফিরছিলেন। তিনি বিএনপি নেতা রাঙ্গার চাচাতো ভাই হওয়ায় অবরোধকারীদের রোষানলে পড়েন। উত্তেজিত জনতা তার গাড়িকে ঘিরে ফেলে। পরিস্থিতি বুঝে স্থানীয় কয়েকজন চেয়ারম্যানের সহায়তায় তাকে বিকল্প পথে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে উত্তেজিত জনতা তার গাড়ির পিছু ধাওয়া করে।
জীবন বাঁচাতে চেয়ারম্যান রেজা বাধ্য হয়ে স্থানীয় এক বাড়িতে আশ্রয় নেন। এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা সেই বাড়ির ভেতর ঢোকার চেষ্টা করে এবং তার গাড়িটি ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অবরোধ তুলে দেয়।
তবে অবরোধকারীরা যেখানে চেয়ারম্যান রেজাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল, সেখানে তখনই নিরাপত্তা বাহিনী পৌঁছাতে পারেনি। পরে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করা হয়।
বিএনপি নেতা রাশেদের অনুসারীরা জানান, গত বুধবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় পীরগাছা উপজেলা পরিষদ হলরুমে সদ্যপ্রয়াত রংপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকুর স্মরণসভায় যোগ দিতে আসেন রাশেদুল ইসলাম রাশেদ। সভা শেষে উপজেলা পরিষদের সামনে বটতলায় অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তার ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল মণ্ডলের অনুসারী বলে দাবি করে রাশেদের পক্ষের নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত আমিরুল ইসলাম বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে এবং সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক করেছে। এখনো মোস্তাফিজার রহমান রেজার পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও জানান, “বিএনপি নেতা রাশেদের ওপর হামলার ঘটনায় একটি এজাহার পেয়েছি, মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।”
এদিকে, পরিস্থিতি যেন পুনরায় উত্তপ্ত না হয়, সে জন্য এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তবে রাশেদের অনুসারীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, সুষ্ঠু তদন্ত ও মামলা না হলে আরও কর্মসূচি দেওয়া হবে।