দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই জমে উঠছে ক্যাম্পাসজুড়ে নির্বাচনী প্রচারণা। প্রার্থীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণে নিচ্ছেন ব্যতিক্রমী ও সৃজনশীল নানা কৌশল। নির্বাচন যেন শুধুমাত্র ভোটযুদ্ধ নয়, রীতিমতো এক প্রাণবন্ত উৎসবের রূপ নিয়েছে।


ছাত্রদল সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর প্রচারণার জন্য বেছে নিয়েছেন প্রজাপতির আদলে তৈরি বিশেষ লিফলেট। এ প্যানেলের এজিএস প্রার্থী জাহিন বিশ্বাস এষা বানিয়েছেন হাতের পাঁঞ্জার আদলে প্রচারপত্র, যার পাঁচটি আঙুলে তুলে ধরা হয়েছে তাঁর নির্বাচনী ইশতেহার।

এ বিষয়ে এষা বলেন, “আমার ব্যালট নম্বর পাঁচ হওয়ায় এমন ডিজাইন করেছি যাতে শিক্ষার্থীদের মনে থাকে। আর লিফলেটের অপর পাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের সময়সূচি যুক্ত করেছি, যেন এটি শিক্ষার্থীদের কাজে আসে।”

একই প্যানেলের সংস্কৃতি সম্পাদক প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কাফী প্রচারণায় নেমেছেন ঐতিহাসিক চরিত্রে রূপ নিয়ে—নবাব সিরাজউদ্দৌলার বেশে। কাফী বলেন, “নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব, ষড়যন্ত্রে তিনি হারলেও, আমি চাই ভোটাররা যেন ইতিহাস বদলান। আজকের প্রেক্ষাপটেও মনে হচ্ছে সংস্কৃতির ওপর আবারো কোনো লর্ড ক্লাইভ আক্রমণ করেছে। আমি সেই প্রতিরোধের প্রতীক হয়েই এসেছি।”


শিবির সমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী জায়িদ হাসান জোহা প্রচারণায় গায়ে দিয়েছেন কৃষকের সাজ, সঙ্গে গাইছেন আঞ্চলিক গাম্ভারি গান। তিনি বলেন, “আমি সংস্কৃতি সম্পাদক পদের প্রার্থী। তাই চেয়েছি প্রচারণায় যেন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ফুটে ওঠে। এতে অনেকের মধ্যে বার্তা পৌঁছায়।”

অন্যদিকে, আধিপত্য বিরোধী ঐক্য প্যানেলের জিএস প্রার্থী সালাউদ্দিন আম্মার নির্বাচনী পোস্টার তৈরি করেছেন দৈত্যরূপে, যার সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে ব্যঙ্গাত্মক প্রচারপত্র। পোস্টারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদলে ব্যঙ্গচিত্র ব্যবহার করায় এটি ঘিরে কিছুটা বিতর্কও তৈরি হয়েছে। তবে প্যানেলের পক্ষ থেকে একে ‘প্রতীকী প্রতিবাদ’ বলা হচ্ছে।

এ প্যানেলের সহ-মিডিয়া সম্পাদক প্রার্থী নূর-নবী এনেছেন আবেগের ছোঁয়া—মাকে সঙ্গে নিয়ে করছেন গণসংযোগ, শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন ভালোবাসা আর সহমর্মিতার বার্তা।


স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী কাজী সফিউল কালাম (কেএসকে হৃদয়) নজর কাড়ছেন গান গেয়ে গেয়ে প্রচারণা চালিয়ে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে নিজের লেখা গান গেয়ে তিনি ছড়িয়ে দিচ্ছেন তার বার্তা।


রাকসু নির্বাচনে এবার ২৩টি পদে লড়ছেন ২৪৭ জন প্রার্থী। এরমধ্যে ভিপি পদে ১৮ জন, জিএস পদে ১৩ জন এবং এজিএস পদে ১৬ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ পর্যন্ত ১২টি প্যানেল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে ছাত্রদল, শিবির সমর্থিত এবং স্বাধীনতাবিরোধী আধিপত্য বিরোধী জোট।

রাকসু ও সিনেট নির্বাচনে মোট প্রার্থী ৩০৬ জন এবং হল সংসদে প্রার্থী ৬০০ জনের বেশি। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১ জন—যার মধ্যে নারী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ জন এবং পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন


আগামী ১৬ অক্টোবর (বুধবার) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলবে। ভোট গণনা শেষে সেদিন রাতেই ঘোষণা করা হবে ফলাফল।