সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছেলে শামীম ইসলাম হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া নিজের মেয়ে রেশমা খাতুনকে নির্দোষ দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নিহতের বাবা ছাইফুল ইসলাম। তার দাবি, প্রকৃত হত্যাকারীদের আড়াল করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তার মেয়েকে মামলায় জড়িয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে।
বুধবার (২২ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি তুলে ধরেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে ছাইফুল ইসলাম বলেন, “গত ২ জুলাই আমার ছেলে মো. শামীম শেখ ইছামতি নদীতে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। দুদিন পর ৪ জুলাই ভদ্রঘাটের এসিআই ফুড লিমিটেড কারখানার পাশে একটি ডোবায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। কচুরিপানার নিচে মরদেহ গচ্ছিত ছিল। এটা নিছক দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত হত্যা।”
তিনি অভিযোগ করেন, হত্যার সঙ্গে কারখানার নিরাপত্তাকর্মী ও কর্মকর্তারা জড়িত থাকতে পারেন বলে সন্দেহ হলেও পুলিশ শুরুতে নাম উল্লেখ করে মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। ছাইফুল দাবি করেন, কামারখন্দ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রব তাকে "অজ্ঞাতনামা" আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ দেন।
“পরে ডিবি পুলিশ কারখানার কয়েকজন কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করলেও, হঠাৎই আমার মেয়ে রেশমা ও এক ভাবি হাফিজাকে গ্রেপ্তার করে মামলাটি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়,” — বলেন ছাইফুল।
ছাইফুলের অভিযোগ, তার মেয়েকে ডিবি পুলিশ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে দুইদিন ধরে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে। এরপর জোর করে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়।
“আমার মেয়েটি তার ভাইকে হত্যা করতে পারে না। সে নির্দোষ। পুলিশ তাকে ফাঁসিয়েছে। মেয়ের সঙ্গে জেলেই আছে তার দুই সন্তান—চার বছরের স্বাধীন আর পাঁচ বছরের নুসরাত। এটা কেমন বিচার?” — কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রশ্ন রাখেন ছাইফুল।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ডিবি পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা তাদের ফোনে ও বাড়িতে এসে হুমকি দিচ্ছেন এবং এসিআই ফুড মিল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে প্রভাবিত করছে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কামারখন্দ থানার এসআই আব্দুর রব বলেন, “আমি তাকে নাম উল্লেখ না করার পরামর্শ দিয়েছি—এই অভিযোগ ঠিক নয়। এমন কিছু বলার প্রশ্নই ওঠে না।”
এদিকে, সিরাজগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একরামুল হোসাইন বলেন, “তার মেয়ে মামলার আসামি। সে সংবাদ সম্মেলন করতেই পারে। এতে আমাদের মাথাব্যথা নেই।”
গত ২ জুলাই সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার কুটিরচর গ্রাম থেকে নিখোঁজ হন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শামীম শেখ। ৪ জুলাই তার মরদেহ ভেসে ওঠে এসিআই ফুড কারখানার পাশে একটি ডোবায়। এ ঘটনায় পরবর্তীতে শামীমের বোন রেশমাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে শামীমের বাবা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন চাচা শহিদুল হাসান, ফুফু আলেয়া খাতুন এবং মা বুলবুলি খাতুন।
ছাইফুল ইসলামের দাবি, “আমরা গরিব মানুষ। কোনো প্রভাব নেই। তাই আমাদের সন্তানদের দিয়েই অন্যদের দায় ঢাকছে পুলিশ। আমি শুধু চাই—আমার নির্দোষ মেয়ের মুক্তি আর ছেলের প্রকৃত হত্যাকারীদের বিচার।”