রংপুরে বছরের পর বছর বিচারপ্রার্থীরা আদালতের বারান্দায় ঘুরেও ন্যায্য বিচার পাননি। বিচারক স্বল্পতা, জনবল সংকট এবং অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে মামলার দীর্ঘসূত্রতা বাড়ছে। এ কারণে বহু মানুষ সহায়-সম্বল বিক্রি করে দীর্ঘ সময় আদালতে আসছেন, তবুও কাঙ্ক্ষিত ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না।

চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সূত্রে জানা গেছে, রংপুরের বিভিন্ন আদালতে বর্তমানে ২৪ হাজারের বেশি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ২০২৪ সালে মোট মামলা ছিল ৫২,০২৫টি, যার মধ্যে ১১,৯৯২টি নিষ্পত্তি, ১৬,৩৪১টি অন্য আদালতে বদলি, ২৩,৬৯২টি বিচারাধীন এবং পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ৭৮৯টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ৩০,৯০৪টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে ২,৮০৫টি নিষ্পত্তি, ৪,১৭৫টি অন্য আদালতে বদলি, ২৩,৯৪৩টি বিচারাধীন এবং পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ৯০২টি মামলা বিচারাধীন।

এক নারী বিচারপ্রার্থী অভিযোগ করেন, তিনি ২৪ বছর ধরে আদালতে এসেছেন, কিন্তু রায়ের জন্য প্রতিনিয়ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কোনো সুফল পাচ্ছেন না, বছরের পর বছর আদালতে ঘুরে চলেছেন।

রংপুর জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে আট উপজেলার ৬৮৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যেখানে ১,১৮১ জন আসামি হয়েছে। ২০২৪ সালে জেলা পুলিশ ৫৩৯টি মামলা দায়ের করেছে, যেখানে ১,১৩৬ জন আসামি।

আইনজীবীরা মনে করেন, মামলা বিলম্বিত হলে আসামিরা সুযোগ পায়, আর বিচার বিলম্বিত হলে মানুষের মধ্যে রাষ্ট্রের আইনি ব্যবস্থার প্রতি বিতৃষ্ণা সৃষ্টি হয়। সরকারি কৌঁসুলি আফতাব হোসেন বলেন, “মামলার সমন জারি, চার্জশিট প্রদান ও সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের কারণে কিছু মামলায় রায়ে তিন-চার বছর সময় লাগতে পারে।”

মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট পলাশ কান্তি নাগ ও সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জোবাইদুল ইসলাম বুলেট বলেন, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে নতুন বিচারক নিয়োগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যকরী পদক্ষেপ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন।