রাজশাহী জেলা কালেক্টরেট মাঠে চলছে ৯ দিনব্যাপী বিভাগীয় বইমেলা। নানা কর্মসূচি ও সাংস্কৃতিক আয়োজনের পাশাপাশি ফুডকার্টগুলোর কারণে বইমেলা এলাকাকে ঘিরে জমে উঠেছে উৎসবের আমেজ। বুধবার (৫ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সন্ধ্যার পর রাস্তার দুই ধারে সারি সারি খাবারের স্টল, চায়ের কাপে আড্ডা আর নানা বয়সী দর্শনার্থীর ভিড়ে পুরো এলাকা রূপ নিয়েছে ছোটখাটো পিকনিক স্পটে।

মেলায় আসা দর্শনার্থীদের কেউ বই ঘুরে দেখছেন, কেউ গল্প করছেন আবার কেউ পরিবার বা বন্ধু নিয়ে নাস্তার দোকানে সময় কাটাচ্ছেন। ফলে বইপ্রেমীদের ভিড়ের সাথে বাড়ছে ফুডকার্টগুলোতে কেনাকাটা।
সি এন্ড বি মোড় থেকে সরিয়ে তিন মাস আগে কালেক্টরেট মাঠের সামনে ফুডকার্টগুলো বসার অনুমতি দেয় প্রশাসন। মেলা শুরু হওয়ার পর থেকেই বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় খুশি ব্যবসায়ীরা।
মেলার গেটের পাশে জিলাপির দোকানি শফিকুল ইসলাম বলেন, মেলা শুরু হওয়ার আগে এমন ক্রেতা ছিল না। এখন সন্ধ্যা নামতেই আমাদের দোকানের সামনে লাইন ধরে মানুষ জিলাপি, পাপড়, কটকটি নিচ্ছে। দিনপ্রতি বিক্রি আগের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে।

পিঠার দোকান চালানো শরীফ জানান, বইমেলায় আসা শিক্ষার্থী আর তরুণরাই বেশি গ্রাহক। অনেকে পিঠা খেতে খেতে বই নিয়ে আলোচনা করে দেখতে ভালো লাগে। আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য এমন আয়োজন বড় সুযোগ।
বক্সিং গেমের কার্ট পরিচালনাকারী হাসিব আলী বলেন, শুধু খাবারের দোকান নয়, বিনোদনের জন্যও ভিড় হচ্ছে। বাচ্চারা বক্সিং খেলছে। মেলাকে ঘিরে পুরো এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

দিনের বেলা তুলনামূলক ভিড় কম হলেও সন্ধ্যার পর মেলা ও ফুডকার্ট এলাকায় নড়াচড়া করার জায়গা পাওয়া দুষ্কর। কেউ বই কিনে বেরিয়ে নাস্তা করছেন, কেউ আবার বই না কিনেও বন্ধুদের সাথে আড্ডা জমিয়ে দিচ্ছেন।
রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী তৌহিদ হোসেন বলেন, কিছু বই দেখেছি, দাম তুলনামূলক একটু বেশি। তাই কিনতে পারিনি। তবে বন্ধুদের সাথে বাইরে বসে আড্ডা দিতে মজাই লাগে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান জানান, বইয়ের চেয়ে আড্ডাই বেশি জমছে। বন্ধুরা নিয়ে আসলেই বাইরে ফুডকার্টে বসে সময় কাটাই। একসাথে মেলা দেখা, নাস্তা করা পুরোটা মিলেই আনন্দ।
মেলার প্রথম দিন বৃষ্টিতে মাঠ কর্দমাক্ত হয়ে যাওয়ায় শুরুতে ভিড় কম থাকলেও এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। প্রকাশকরা বলছেন, দর্শনার্থী বাড়ছে, বিক্রিও বাড়বে।

অন্যধারা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মোস্তফা কামাল বলেন, শুরুর দিকে বৃষ্টি ও কাদা থাকায় ক্রেতা কম ছিল। এখন পরিস্থিতি ভালো মানুষ বই দেখছে, কিনছে, অর্ডার দিচ্ছে। রাজশাহীর পাঠকেরা বই নিয়ে খুবই আগ্রহী, সেটা দেখে আমরা উৎসাহ পাই।
অক্ষর বুননের স্বত্বাধিকারী মোঃ আমির হোসেন বলেন, অনেক স্টলে নতুন বই এসেছে, শিক্ষার্থী ও তরুণরাই বেশি কিনছে। বিশেষ করে গল্প, উপন্যাস ও ক্যারিয়ার সংক্রান্ত বইয়ের বিক্রি ভালো। শেষের তিন দিনেই আসল ভিড় হয় আমরা ভালো ফলের আশায় আছি।
পরিবারসহ মেলায় ঘুরতে আসা গৃহিণী তাহমিনা সুলতানা বলেন, বই কিনেছি, বাচ্চাদের গল্পের বইও কিনেছি। তারপর বাইরে বসে পিঠা খেয়েছি। সত্যি বললে বইমেলা যেন উৎসব, শুধু কেনাকাটা নয়, পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর জায়গা।

বইমেলার স্টলে বইপড়া মানুষ আর বাইরে খাবারের স্টলে আড্ডা এ দুয়ের সমন্বয়ে কালেক্টরেট মাঠের সামনে পুরো এলাকা এখন রাজশাহীর অন্যতম মিলনমেলা। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে এবং রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় শুরু হয়েছে এই মেলা। গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) উদ্বোধিত মেলা চলবে আগামী ৮ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকে, আর সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সকাল ১১টা থেকে শুরু হয় এই বই মেলা। এবারের মেলায় ১১টি সরকারি দপ্তর ও ৭০টি বেসরকারি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসহ মোট ৮১টি স্টল অংশ নিয়েছে।
ইএফ/