বগুড়ায় নতুন সংসার টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে। প্রতি বছর যত বিয়ে হচ্ছে, তার প্রায় অর্ধেকই তালাকের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, পরকীয়া, মাদকাসক্তি, যৌতুক, মতের অমিল এবং আয়-ব্যয়ের বিরোধ—সব মিলিয়ে নতুন সংসারগুলো ভাঙনের মুখে পড়ছে, যা শিশুদের মানসিক বিকাশ ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
বগুড়া জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে জেলার ১২ উপজেলায় নতুন বিয়ে ৮০,৫২৭টি, আর একই সময়ে তালাক হয়েছে ৩৮,৪০৮টি। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে তালাকের হার বেশি, যেখানে স্বামীর মাদক ও জুয়ার আসক্তি মূল কারণ।
চিকাশী ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজি মো. সুজন মিয়া বলেন, অনেকে জুয়ায় আসক্ত হয়ে সংসারের খরচ বহন করতে পারে না, ফলে সম্পর্ক ভেঙে যায়। শহরে অহংবোধ, পরকীয়া ও দাম্পত্য টানাপোড়েন প্রধান কারণ।
আইনজীবী নাসরিন জাহান জেরিন বলেন, নারীরা স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। এতে ইতিবাচক দিক যেমন আছে, তেমনি কখনো অহংবোধও জন্ম নিচ্ছে, যা দাম্পত্য সম্পর্কের দূরত্ব বাড়াচ্ছে।
শিশু আদালতের পিপি ও সমাজকর্মী সুфিয়া বেগম বলেন, বাবা-মা বিচ্ছেদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় সন্তানের। এতে শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।
সিনিয়র আইনজীবী আব্দুল হান্নান বলেন, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, পারিবারিক বন্ধনের দুর্বলতা, যৌথ পরিবারের অভাব এবং নারীর আর্থিক স্বাধীনতা—সব মিলিয়ে তালাকের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জেলা রেজিস্ট্রার সিরাজুল করিম বলেন, নারীরা এখন সচেতন। অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে জানে, তাই তালাকের ঘটনা বাড়ছে। সংসার ভেঙে গেলে সন্তানের ওপর প্রভাব পড়ে। স্বামী-স্ত্রীর সহনশীলতা ও ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকা জরুরি।
সুশীল সমাজ মনে করছে, সম্পর্ক রক্ষায় পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বোঝাপড়া ও সহমর্মিতা বাড়াতে হবে। ধর্মীয় মূল্যবোধ, পারিবারিক ঐক্য ও সামাজিক বন্ধন পুনরুজ্জীবিত না করলে প্রবণতা রোধ সম্ভব হবে না।
বগুড়ায় প্রতি দুটি নতুন বিয়ের একটির পতন, যা শুধু পারিবারিক নয়, সামাজিক সংকটের ইঙ্গিত। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, সম্পর্কের টানাপোড়েন, মাদকাসক্তি ও মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ না হলে এই প্রবণতা ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারে।