রাজশাহীতে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত নতুন করে ২৮ জন এইচআইভি পজেটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে এর মধ্যে ২৫ জন পুরুষ, ২ জন নারী ও একজন হিজড়া। এই সময়ের মধ্যে একজন রোগী মারা গেছেন। গত কয়েক বছরের তুলনায় এ সংখ্যা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে বলে জানিয়েছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা।
রামেকের এইচটিসি (এইচআইভি টেস্টিং অ্যান্ড কাউন্সেলিং) সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৯৩ জন রোগী এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে আটজন মারা গেছেন। কেবল ২০২৫ সালের প্রথম ১০ মাসেই আক্রান্তের হার আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, রাজশাহীতে যৌনকর্মীদের তুলনায় সমকামী সম্পর্কের মাধ্যমেই এইচআইভি ছড়াচ্ছে বেশি। ২০২৫ সালে শনাক্ত ২৮ জনের মধ্যে ১৭ জনই সমকামিতার মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছেন। বাকি ১০ জন যৌনকর্মীদের মাধ্যমে এবং একজন রক্ত সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন।
রামেকের কাউন্সেলর রেজাউল করিম বলেন, এখানে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন এইচআইভি পরীক্ষার জন্য আসেন। যাদের পজেটিভ ধরা পড়ে, তাদের কাউন্সেলিং করা হয়। তবে এখনো এখানে ওষুধ দেওয়া যায় না। আক্রান্তদের বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে যেতে হয়, যেখানে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হয়।
তিনি আরও জানান, অনেকে প্রথমবার পজেটিভ হওয়ার খবর শুনে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। কেউ কেউ আত্মহত্যার চিন্তাও করেন। এই কারণে নিয়মিত কাউন্সেলিং খুবই জরুরি।
রামেকের ফোকাল পারসন ডা. ইবরাহীম মো. শরফ বলেন, অরক্ষিত যৌনসম্পর্কই এইচআইভি সংক্রমণের প্রধান কারণ। নারী-পুরুষের সম্পর্কের পাশাপাশি পুরুষে-পুরুষের সম্পর্কেও সংক্রমণ বাড়ছে। মা থেকেও শিশুর মধ্যে এইচআইভি ছড়াতে পারে গর্ভকাল, প্রসবকাল ও দুধ খাওয়ানোর সময়।
তিনি প্রতিরোধে সচেতনতার ওপর জোর দিয়ে বলেন, যৌনসম্পর্কে কনডম ব্যবহার, একাধিক সঙ্গী পরিহার, রক্ত সঞ্চালনের আগে পরীক্ষা, এবং পরিষ্কার ইনজেকশন ব্যবহার এইচআইভি প্রতিরোধে এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সেখানে খুব শিগগিরই একটি পূর্ণাঙ্গ এআরটি (অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি) সেন্টার চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি চালু হলে রাজশাহী ও আশপাশের জেলার রোগীরা স্থানীয়ভাবে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ পেতে পারবেন।