চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ এলাকায় বিষাক্ত মদপানে ছয়জনের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তের স্বার্থে চারজনের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। আগামী মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে এসব মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) জামাল আল নাসের আলী।
তিনি জানান, ঘটনার পর সদর থানায় মামলা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দুইজনের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আদালতের নির্দেশে বাকি চারজনের মরদেহও উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা হবে।
যাদের মরদেহ উত্তোলন করা হবে তারা হলেন— চুয়াডাঙ্গা সদরের পিরোজখালী গ্রামের নবীছউদ্দিনের ছেলে লাল্টু হোসেন, খেজুরা গ্রামের মৃত দাউদ আলীর ছেলে সেলিম (৪৫), নফরকান্দি গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে খেদের আলী (৫০) এবং শংকরচন্দ্র গ্রামের শহিদুল মোল্লা।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাতে ডিঙ্গেদহ বাজার এলাকায় বেশ কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি মিলে বিষাক্ত অ্যালকোহল পান করেন। পরদিন সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পরবর্তী সময়ে ছয়জনের মৃত্যু হয়। রোববার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজনের মৃত্যুর পর ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে।
পুলিশ জানায়, নিহতদের মধ্যে চারজনকে গোপনে দাফন করা হয়েছিল। পরে আদালতের নির্দেশে তাদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য উত্তোলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নিহতরা হলেন— নফরকান্দি গ্রামের ভ্যানচালক খেদের আলী (৪০), খেজুরা হাসপাতালপাড়ার মাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ সেলিম (৪০), পিরোজখালী স্কুলপাড়ার ভ্যানচালক লালটু ওরফে রিপু (৩০), শংকরচন্দ্র মাঝেরপাড়ার শ্রমিক শহীদ (৪৫), ডিঙ্গেদহ টাওয়ারপাড়ার মিল শ্রমিক সামির (৫৫) এবং এশিয়া বিস্কুট ফ্যাক্টরি পাড়ার শ্রমিক সরদার লালটু (৫২)।
পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, এই মৃত্যুর সঙ্গে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় ব্যবহৃত মেয়াদোত্তীর্ণ স্পিরিটের যোগসূত্র রয়েছে। এ ঘটনায় জেলা পুলিশ মূলহোতাসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১১৭ বোতল বিষাক্ত স্পিরিট।
মামলার পর পুলিশ ঝিনাইদহ থেকে মূল আসামি ফারুক আহমেদ ওরফে ‘অ্যালকো ফারুক’ (৪০) এবং তার সহযোগী জুমাত আলীকে (৪৬) গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে ফারুক স্বীকার করেছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে লাইসেন্সবিহীনভাবে হোমিও চিকিৎসার নামে মেয়াদোত্তীর্ণ অ্যালকোহল বিক্রি করে আসছিলেন এবং চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ দিতেন।
পুলিশের ধারণা, ফারুকের সরবরাহ করা এই বিষাক্ত স্পিরিট পান করেই ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। জনস্বার্থে এ ধরনের অপরাধ দমনে কঠোর অবস্থানে রয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশ।