রাজশাহী শহরের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে যেন মৃত্যুফাঁদ! প্রতিদিনই চুরি হচ্ছে ড্রেনের স্লাব। একদিকে খোলা ড্রেন, অন্যদিকে রাতের আঁধারএই দুই মিলে নগরবাসীর চলাচল হয়ে উঠেছে প্রাণহানির শঙ্কায় ভরা এক যুদ্ধ। নগরীর ব্যস্ততম সড়কগুলোর ড্রেন এখন আর ঢাকা নেই, নেই স্লাব। কোথাও একটানা ২০, কোথাও ৩০টিরও বেশি স্লাব উধাও।

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহীর বাইপাস সড়কের বহরমপুর থেকে কাশিয়াডাঙ্গা রোড পর্যন্ত অন্তত ৩০ থেকে ৩৫টি স্লাব নেই। স্টেশন থেকে লক্ষীপুর পর্যন্ত অন্তত ২০-২৫টি স্লাব চুরি হয়ে গেছে। টিবি হাসপাতালের সামনের সড়কে ১০-১৫টি, উপশহর মোড় থেকে সপুরা পর্যন্ত অন্তত ১৫-২০টি স্লাব গায়েব।

এছাড়াও, নগরীর বিভিন্ন গলিপথ, পাড়া-মহল্লা, এমনকি বাজার সংলগ্ন সড়কগুলোতেও দেখা মিলছে খোলা ড্রেনের। কোনো কোনো রাস্তায় অর্ধ কিলোমিটার পরপর আবার কোথাও এক কিলোমিটার ব্যবধানে একাধিক স্লাব চুরি হওয়া ড্রেন পড়ে আছে জনমানবহীন, অথচ প্রাণঘাতী।

বহরমপুর এলাকার বাসিন্দা ফিরোজ বলেন, আমার ছেলেটা সাইকেল চালাতে গিয়ে ড্রেনের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। ভাগ্য ভালো, বড় কিছু হয়নি। এখন আর ওকে রাস্তায় একা পাঠাই না। কিন্তু কতদিন এই আতঙ্ক নিয়ে বাঁচব? অন্যদিকে, লক্ষীপুর এলাকার মেহেদী হাসান জানান,

রাতের বেলা যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। রাস্তা যেমন ভাঙা, তেমনি কোথাও কোথাও স্লাব চুরি হয়ে পড়ে আছে ড্রেন খোলা। এর মধ্যে চলাচল মানে জীবন নিয়ে খেলা।

এই স্লাবগুলো মূলত কংক্রিট ও লোহার তৈরি। সেগুলো ভেঙে কাঁচামাল হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে স্থানীয় কিছু ভাঙারি দোকানে। সময় সুযোগ বুজে রাতের অন্ধকারে সংঘবদ্ধ চক্র ট্রলি ও পিকআপে করে এসব স্লাব তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ভাংড়ি জিনিসপত্রের ব্যবসায়ী সালাম জানান, লোহার স্লাব ভেঙে টুকরা করে বিক্রি করা সহজ। অল্প কিছু টাকার জন্য বখাটে নেশাখোররা স্লাব গুলো ভেঙ্গে সেগুলোর রড বিক্রি করে।

উপশহরের বাসিন্দা অমি জামান বলেন, নগরের অনেক জায়গায় দিনের পর দিন স্লাব চুরি হয়ে পড়ে আছে, অথচ প্রশাসনের কোনো নজর নেই। কোনো সতর্কতার চিহ্ন পর্যন্ত নেই। শিশুরা যাচ্ছে, বয়স্করা হোঁচট খাচ্ছে। ড্রেনের স্লাব চুরি হওয়া কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এটা একটা নগর ব্যবস্থাপনাগত ব্যর্থতা। জরুরি ভিত্তিতে নজরদারি, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও পুনঃস্থাপন কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

রাজশাহী জেলা সুজনের সভাপতি আহমেদ শফী উদ্দিন বলেন, খোলা ড্রেনের কারণে দুর্ঘটনা শুধু সময়ের ব্যাপার। কেউ পড়ে গিয়ে আহত হলে তার দায় কে নেবে? সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব কি শুধুই রাস্তা পরিষ্কার করা?

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, স্লাব চুরির বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ড্রেনের স্লাব চুরি হওয়া নিয়ে আমরাও খুব উদ্বিগ্ন। যে সমস্ত চোরেরা এই স্লাব চুরি করছে তাদেরকে অতি শীঘ্রই আইনের আওতায় আনার জন্য আমরা পুলিশের কাছে আবেদন করেছি।

রাজশাহী নগরবাসী এখন প্রতিটি পা ফেলছেন শঙ্কা নিয়ে। পথ চলা মানেই যেন মৃত্যু আর আহত হওয়ার ভয়। সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল ভূমিকা না থাকলে এই অব্যবস্থাপনা কত প্রাণ কেড়ে নেবে, তা সময়ই বলবে। তাই এখনই সময় অবিলম্বে স্লাব স্থাপন, চোরচক্র শনাক্ত ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের। এ বিষয়ে সাবেক সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ইএফ/