আসন্ন বৃষ্টির আশঙ্কায় চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মুন্সীগঞ্জের সবজি চারা চাষিরা। শীতকালীন সবজির চারা বিক্রি করে প্রতিবছর প্রায় তিন কোটি টাকার ব্যবসা হয় এই জেলায়। তবে এবারের মৌসুমে প্রাকৃতিক অনিশ্চয়তা আর বাজারের সিন্ডিকেট একসঙ্গে কৃষকদের লাভের স্বপ্নে ধাক্কা দিয়েছে।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেল থেকে মুন্সীগঞ্জের আকাশে ঘন মেঘ ও বিদ্যুতের ঝলকানিতে ভীত কৃষকেরা বীজতলা রক্ষায় বেপরোয়া হয়ে পড়েন। অনেকেই বাঁশ ও চাটাই দিয়ে চারাগুলো ঢেকে রাখছেন, আবার কেউ কেউ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করছেন— যেন বৃষ্টির পানি জমে গাছ নষ্ট না হয়।

মুন্সীগঞ্জ সদর ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলার শতাধিক কৃষক ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, টমেটো, ব্রোকলি, কুমড়া ও বেগুনের চারা উৎপাদনে যুক্ত আছেন। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এখানকার চারা কেরানীগঞ্জ, সাভার, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ, চাঁদপুর ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়।

কৃষকরা জানিয়েছেন, বীজতলা তৈরিতে তারা আগস্টের মাঝামাঝি থেকে কাজ শুরু করেন। একেকটি বীজতলা থেকে তিন দফায় চারা বিক্রি সম্ভব হয়। তবে এবছর সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে দ্বিগুণ। এক কেজি কপি বীজের দাম এখন এক লাখ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। কৃষকদের অভিযোগ, বীজ আমদানিতে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে।

বানিক্যপাড়া এলাকার কৃষক আব্দুস ছালাম বলেন, আগের বৃষ্টিতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। এবার আশা ছিল কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর। কিন্তু যদি আবার ভারি বৃষ্টি হয়, সব শেষ হয়ে যাবে।

ভট্টাচার্যেরবাগের কৃষক বাবু বলেন, এবার বীজের দাম এত বেড়েছে যে লাভ তো দূরের কথা, মূলধনই উঠে আসবে কিনা সন্দেহ।

শ্রমিক আবু সাঈদ বলেন, চারা চাষ মানে ছোট শিশুর মতো যত্ন নিতে হয়। রোদ-বৃষ্টি সব সামলে রাখতে হয়। এখন সবাই দোয়া করছে যেন আকাশটা আর না ফাটে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জেলায় ৪ হাজার ৯০৭ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার উৎপাদন লক্ষ্য ১ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন।

অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, কৃষকদের পানি নিষ্কাশনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, পূর্বাভাস অনুযায়ী ভারি বৃষ্টি হবে না। তারপরও আমরা মাঠ পর্যায়ে তাদের সহায়তা করছি।

স্থানীয় কৃষকদের ভাষায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মুন্সীগঞ্জের চারা আবারও দেশের সবজির বাজারে প্রাণ ফেরাবে। তবে এক রাতের বৃষ্টিই সেই আশাকে মাটি করতে পারে।